আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ!
জনাব মুফতি সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হলো ছোট কাল থেকে শুনে আসছি রমজান মাস তিন ভাগে বিভক্ত।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত।
এখন আবার শুনছি এগুলো নাকি জাল হাদীস।
এখন কোনটা সঠিক?
দলিল সহ জানালে উপকৃত হবো।
যে কারণে রমজানকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতে ভাগ করা হয়েছে
রমাযানকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এই তিনভাগে ভাগ করার বিষয়ে নবী আ. হতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যা ইমাম বায়হাকি রহ. তার শু’আবুল ঈমানে ও ইমাম ইবনে খুযাইমা রহ. তার সহিহ ইবনে খুযাইমাতে আলী বিন যায়েদ সুত্রে হযরত সালমান ফার্সি রা. হতে বর্ণনা করেন।হাদিসটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
هو شهر أوله رحمة و أوسطه مغفرة و آخره عتق من النار ….. قال الأعظمي : إسناده ضعيف علي بن زيد بن جدعان ضعيف
রমজান এমন মাস, যার শুরুতে রহমত, মাঝে মাগফিরাত এবং শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (ইবনে খুযাইমা- ১৮৮৭)
সনদের মান : আ’জমি বলেন, হাদিসের সনদটি দূর্বল। কেননা তাতে আলী বিন যায়েদ বিন জাদআ’ন আছে।
আলী বিন যায়েদ সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্যগুলো নিম্নরূপ এমন ,
وكان كثير الحديث وفيه ضعف ولا يحتج به. ، وليس بالقوي ،
হাদিস শাস্ত্রবিদ মাত্রেরই জানা কথা যে, এধরণের বাক্য দ্বারা সমালোচিত রাবীদের বর্ণনা দ্বারা কোন বিধানের ক্ষেত্রে দলিল পেশ করা না গেলেও সাব্যস্ত আমলের ফযিলত প্রমাণে প্রশ্নাতিতভাবে পেশযোগ্য। যেমন ইমাম সাখাভী রহ. বলেন:
هذا التساهل في العمل بالحديث الضعيف في فضائل الاعمال والترغيب والترهيب والمناقب ونحو ذلك…
ফাতহুল মুগিস – ১/২৮৮। তাছাড়া ইমাম ইবনুল হুমাম রহ.ও অনুরূপ মত পেশ করেন- ফাতহুল কাদির -১/৪৬৮।
উল্লেখ্য সনদে বর্ণিত রাবী আলী ইবনে যায়েদ ইবনে জাদআন এর ব্যাপারে সমালোচনার পাশাপাশি ভাল মন্তব্যগুলোও কম নয়। এমনকি ইমাম হাকেম রহ. তার মুস্তাদরাকে আলী বিন যায়েদ সূত্রে একাধিক রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। এবং ইমাম দারা কুতনি রহ. উক্ত সনদকে হাসান বলা রাবী আলী বিন যায়েদের গ্রহণযোগ্যতাকে দৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করে। খোদ ইমাম হাকেম রহ. এর উক্তি নিম্নে পেশ করা গেল: هذا حديث صحيح رواه الناس عن علي بن زيد بن جدعان تفرد به
বিশেষভাবে হাফেজ যাহাবী রহ. এর উক্তি তো আরো চমকে ওঠার মত। তিনি বলেন:
و إنما يعرف هذا المتن من حديث علي بن زيد بن جدعان عن أنس تعليق الذهبي قي التلخيص : رواته ثقات على شرط مسلم
আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি সাহেবও একই ধরণের মত পেশ করেন। ইবনে মাজাহ ও তিরমিযি শরীফে আলী বিন যায়েদ বর্ণিত হাদিসের কোন কোনটাতে যয়ীফ বললেও দুয়েকটাতে তিনিই আবার সহীহ বলে মত দিয়েছেন।
মোটকথা, রমযানকে তিন ভাগে ভাগ করার হাদীসের ব্যাপারে মোটামুটি বিতর্ক থাকলেও তা ফাযায়েলের ক্ষেত্রে সহনীয় হওয়াতে কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়।