হুজুর ও কলা বিজ্ঞানী !

‘আচ্ছা হুজুর, আপনারা যে এতো আফটার লাইফ, আফটার লাইফ (পরকাল ) বলে দিনরাত জপতে থাকেন, ধরেন মরার পরে দেখলেন, আফটার লাইফ বলে কিছু নেই তখন কেমন লাগবে?’ – কলাবিজ্ঞানী তাচ্ছিল্যপূর্ণ ভঙ্গিমায় জিজ্ঞাসা করলো।
‘পরকাল আছে কি নাই সে বিষয়ে পরে আসছি, তার আগে বলে নেই, আপনার প্রশ্নের মধ্যেই তো স্পষ্ট অজ্ঞতার ছাপ।’- হুজুরের পাল্টা প্রশ্ন।
কিভাবে?- কলাবিজ্ঞানী কিছুটা বিরক্ত।
‘এমনিতে তো আর বলি নাই। আপনারাই তো বলে বেড়ান মরার পরে মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতি, চেতনা এমনভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় যেনো কোনো জড় পদার্থ। আপনিই বলেন, একটা ‘জড় পদার্থ’কে ‘কেমন লাগবে’ জিজ্ঞাসা করার থেকে গাধামিপূর্ণ প্রশ্ন দুনিয়াতে আর একটিও আছে কি?’- হুজুরের উত্তর।
কলাবিজ্ঞানী কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে, ‘না , মানে আমি এতটা ভেবে দেখিনি বিষয় টা।’
‘সমস্যা নাই, আপনারা কলাবিজ্ঞানীরা যদি ভাবতেই পারতেন তাহলে তো সব ঠিক হয়ে যেতো। যাইহোক, আপনি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটা বুঝেছি।’- হুজুর শান্তভাবে জবাব দিলো।
‘তাহলে আমার প্রশ্নের জবাব দিন’, গলার স্বর নরম করে কলাবিজ্ঞানী বললো।
‘যেহেতু আপনাদের ভাষ্যমতে মরার পরে মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতি, চেতনা বিলুপ্ত হয়ে যায়, সেই অবস্থায় পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তার ইবাদাত বন্দেগী করে লাভ হয়েছে না ক্ষতি হয়েছে এইটা ভাবার তো কোনো উপায়ই নাই। কেমন লাগার প্রশ্ন তো বাদই দিলাম। এখন আপনি চিন্তা করে দেখেন, পরকাল যদি সত্য হয় আপনাদের তখন কি হবে?’ হুজুরের নির্লিপ্ত জবাব।
কলাবিজ্ঞানী ভাবছেন. চিন্তার চাপ স্পষ্ট চেহারায়। কিছুক্ষন ভেবে বলে উঠলেন,
‘বুঝলাম পরকাল সত্য হলে আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে আর মিথ্যা হলে কারোরই লাভ, লস হওয়ার চান্স নাই। কিন্তু মিথ্যা হলে তো, আপনারা দুনিয়ার আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হলেন?’
হুজুর মৃদু হেসে দিয়ে…
‘হুজুররা দুনিয়ার শান্তি আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়, এই কথাটা কোনোদিন কোনো হুজুরের মুখে শুনেছেন?’
‘তা শুনিনি কিন্তু বাইরে থেকে তো বুঝা যায়?’- কলাবিজ্ঞানীর উত্তর।
‘আপনার এই প্রশ্নের হাজারো উত্তর আছে, আমি শুধু একটা উদাহরণ দিবো,
কয়দিন আগে বিখ্যাত গায়ক চেস্টার বেনিংটন সুসাইড করেছে এটাতো জানেন নিশ্চয়ই?’
‘হা দেখেছি, খুব খারাপ লাগছিলো, কেনো যে সে এমন করলো’- কলাবিজ্ঞানীর কণ্ঠে হাহাকার।
‘চেস্টারের তো দুনিয়াতে উপভোগ করা যায় এমন কোনো বস্তুর অভাব ছিল না। অর্থবিত্ত, সুনাম, পপুলারিটি, নারী কি ছিলো না? তারপরেও শান্তির খোঁজ পেলো না। কোনোদিন শুনেছেন, কোনো হুজুর সুইসাইড করেছেন? অর্থের অভাব আছে, মানুষের কাছে মূল্য নেই, সমাজের চোখে অতি সাধারণ, তারপরেও কোনো হুজুর এইসব জিনিসের অভাববোধের কারণে সুইসাইড করেছেন বলে শুনেছেন?’- হুজুরের জিজ্ঞাসা কলাবিজ্ঞানীর কাছে।
কলাবিজ্ঞানী চিন্তাযুক্তভাবে বললো, ‘কিন্তু তাদের দেখলে তো মনে হয় তারা অনেক কষ্টে আছে?’
‘দেখুন এটা আপনার মিথ্যা, অলীক ভাবনা। আপনাদের মতো কলাবিজ্ঞানীদের কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, ভাই কেমন আছেন? খুব কমসংখ্যক কলাবিজ্ঞানী আছে যারা বলে ভালো আছি, অধিকাংশের উত্তর হয়, আছি কোনোরকম বা ঝামেলায় আছি।অনেকে তো জানেই না তার সমস্যা কি? খালি বলে মন ভালো নেই। কিন্তু একজন হুজুরকে জিজ্ঞাসা করেন, ভাই কেমন আছেন? দেখবেন হাসি মুখে উত্তর দিয়ে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ভালো রাখছেন। হুজুর যখন শেষ রাতে তার প্রভুর সাথে কথা বলে অশ্রু ঝরিয়ে যে প্রশান্তি অনুভব করে আপনারা তা কল্পনাও করতে পারবেন না।’- হুজুর শান্ত হয়ে জবাব দিলো।
হুজুর আরো কিছু বলতে চাইলে, কলাবিজ্ঞানী তাড়া আছে বলে বিদায় নিলো, আর ভাবতে লাগলো, যা করছি তা ঠিক করছি তো? অন্যদিকে হুজুর সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে কলাবিজ্ঞানীর দ্বীনের পথে ফিরে আসার দুআ করতে থাকলো।

Saifur Rahman

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *