হুকুমের হিকমাহ
.
সাধারণত নাস্তিক, সংশয়বাদী, চুশীলরা ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে প্রশ্ন করে মুমিনদের চিন্তায় ফেলতে চায়। অনেকে বিধিবিধানের পিছনে হিকমাহ না জেনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। ‘পুরষদের চার বিয়ে জায়েজ, মহিলাদের কেন নেই’, ‘মদকে কেন পুরোপুরি রহিত করা হল, দাসপ্রথা কেন রেখে দেওয়া হল’, ‘হজ্জ করা ফরজ কেন করা হল?’ অর্থাৎ ‘এটা এমন দেওয়া হল কেন?’ ‘ওটা অমন হল কেন?’ ‘ওইরকম কেন হল না’ – বিধিবিধানগত এমন সমস্ত প্রশ্নের মূল ও প্রাথমিক বিষয়গুলো আলোচিত হল।
.
প্রথমত, স্বঘোষিত নাস্তিক বা সংশয়বাদী কারও কাছে ইসলামকে ডিফেন্ড করবার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয় নাই। আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদাতের উদ্দেশ্যে। এমন নাস্তিক আর সংশয়বাদীদের কথায় মনোযোগ না দেওয়াই উত্তম। কারণ ওরা সাধারণত এটাই নিয়্যাত করে নেয় যে ঈমান আনবে না। বরং বিধি বিধান নিয়ে প্রশ্ন করে ঈমানদারদের ঈমান নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করবেঃ ঠিক শয়তানের মত। শয়তান নিজে জাহান্নামী, আর সে আরও মানুষকে তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চায়। তাই এদের কার্যকলাপে মনোযোগ না দেওয়ার পরামর্শ থাকল।
.
দ্বিতীয়ত, বিধিবিধান নিয়ে যেসব প্রশ্ন করা হয় সেগুলো আলোচনারই দাবি রাখে না। এধরনের প্রশ্ন অবান্তর আর এর সহজ উত্তর হলঃ কারণ আল্লাহ বিধান প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অধিকারী এবং তিনি এমনটাই চেয়েছেন।
.
বিধিবিধান নিয়ে প্রকৃতপক্ষে নাস্তিক আর সংশয়বাদীদের প্রশ্ন করার আসল কারণ এই যে – তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না। আল্লাহ এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, তিনিই বিধান দেওয়ার একমাত্র অধিকারী। এই বোধটি যার থাকবে সে সহজেই বিধান মেনে নিতে পারে। নাস্তিকদের এই বোধ নেই বলেই তারা সবকিছুতে কেন প্রশ্ন করে। আল্লাহ যে বিধান কল্যাণকর মনে করেছেন তাই দিয়েছেন – একথা বললেও ঈমান না আনতে চাওয়া ওরা প্রশ্ন করবে, আল্লাহ কেন এটাকে কল্যাণকর মনে করলেন? কেন তার বিপরীত কাজটিকে কল্যাণকর মনে করলেন না? – ওদের প্রশ্ন কখনোই শেষ হবে না। কারণ ওরা বিশ্বাসই করতে চায় না। অথচ সমস্ত বিধানের পিছনে হিকমাহ আমাদেরকে জানানো হয় নাই। কারণ এই দুনিয়ার পরীক্ষা পাশ করতে সমস্তকিছুর উত্তর জানা আমাদের প্রয়োজন নাই।
.
সবকিছুতে ‘কেন’ প্রশ্ন যে অবান্তর তার একটা উদাহরণ দিই। যেমনঃ কোনো নাস্তিকের নাম ‘আশিকুর’ কেন হল? কেন ‘ফাসিকুর’ হল না? তার বাবা মা রেখেছে – তাই? কেন সেটাই রাখল? কেন অন্য নাম রাখল না?… এভাবে চলতেই থাকবে। কোনও নাস্তিক বা বিধিবিধান নিয়ে প্রশ্নকারী হয়তো তাদের নাম নিয়ে কখনো এভাবে ভেবে দেখে না অথচ প্রশ্নগুলো একই ক্যাটাগরির। তার বাবা মা এই নামটাই পছন্দ করেছে, তাই রেখেছে। তেমনি আল্লাহ সুবহানাহুতা’লাও যেকোনো বিধান দেওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকারী এবং তিনি তাঁর ইচ্ছামত উপযোগী বিধান দিয়েছেন – ব্যস।
.
তৃতীয়ত, কারও ঈমান আনিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয় নাই। আমাদের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেওয়া। ঈমান আনা বা না আনা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই ঈমান কে আনলো আর কে নাস্তিকই রয়ে গেল তাতে সেই ব্যক্তি ছাড়া কারও কিছু যায় আসে না। এটা শুধুমাত্র ওই ব্যক্তিরই বিশ্বাসের ব্যাপার, ওই ব্যক্তিরই জান্নাত-জাহান্নামের ব্যাপার। দ্বিতীয় পয়েন্টে সমস্ত নাস্তিকদের বিধান সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নের মূল জবাব দেওয়া হয়েছে। কেউ মানলো কি না মানলো সেটা তার ব্যাপার।
.
পরিশেষে উল্লেখ্য, কিছু বিধিবিধানের হিকমাহ আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন আমাদের জানিয়েছেন। সেসব হিকমাহ আমাদের ঈমানকে শক্ত করে। কিন্তু কোনো হুকুমের পিছনে হিকমাহ জানা না থাকা প্রকৃত মুমিনদের হৃদয়ের ঈমান তো কমায়ই না, বরং সেই হিকমাহ জানা থাকা থেকেও বেশি ঈমান সঞ্চার করে। কারণ সে তখন পুরোপুরি আল্লাহর উপর ভরসা করে। তার বিশ্বাস তখন গায়েবে বিশ্বাসে গিয়ে বর্তায় – ঠিক যেমনটি আল্লাহ আমাদের থেকে চান।
.
হুকুম দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ, তাই হুকুমের হিকমাহ না জেনেও বান্দা মেনে নেয়। নাস্তিক, সংশয়বাদী আর নাস্তিকতা আক্রান্ত চুশীলরা মনে প্রাণে বিশ্বাসই করে না যে আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন হলেন সৃষ্টিকর্তা। তানাহলে একথা বাচ্চারাও বোঝে – সৃষ্টি করেছেন যিনি, হুকুম দেওয়ার একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র তাঁরই।
.
.
লেখকঃ তানভীর আহমেদ
Leave Your Comments