রোজার পর কওমিপন্থী উলামায়ে কেরামের নের্তৃত্বে নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা

 

ঢাকা: রোজার পর আসছে দেশের কওমিয়াপন্থী আলেম ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি নতুন জোট। এ নিয়ে রাজনৈতিক জোটগঠনের জল্পনা-কল্পনা শুর“ হয়েছে। এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন কওমিয় আলেমরা। ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। রোজায় বড় পরিসরে আলোচনা হওয়ার পরই সিদ্ধান্ত আসবে। ঈদের পর এই জোট আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এরই অংশ হিসেবে আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ‘সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্রঐক্য’ গঠন করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক জোট নাও হতে পারে।

উদ্যোক্তাদের মতে, বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিয়ে একমঞ্চে আসা গেলে নির্বাচনি জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরে একাধিক প্রতিবেদনে জানা গেছে- ইসলামি দলগুলোয় বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্য-প্রক্রিয়া হবে। ওই প্রতিবেদনগুলোয় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা জানিয়েছিলেন, ইসলামি দলগুলোর ঐক্য সময়ের দাবি। ওই সময় কিছু দল ও আলেম পিছিয়ে পড়ায় ওই উদ্যোগটি বাস্তবে রূপ নেয়নি।

সূত্রের দাবি, প্রাথমিকভাবে তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঐক্যপ্রক্রিয়া গোছানো হচ্ছে। লক্ষ্যগুলো হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলেমদের সমন্বিত পদক্ষেপ। নির্বাচনে সারাদেশে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নিজেদের প্রার্থী দেবে এই সম্ভাব্য জোট। দ্বিতীয়, ‘নাস্তিক মুরতাদ ও ‘দেশে ইসলামিবিরোধী অপশক্তি’কে মোকাবেলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, কর্মসূচি প্রদান। তৃতীয়ত, দেশে ‘ইসলামি তাহজিব-তামাদ্দুন সুরক্ষায়’ সমন্বিত পর্যালোচনা অব্যাহত রাখা।

২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামি দলগুলো ধারণা করছে, নতুন গঠিতব্য ইসলামি জোটের পেছনেও সরকারের সহযোগিতা রয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ভেতর থেকেও আলেমদের মধ্যে জঙ্গিবাদ, জামায়াত বিরোধিতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তৎপর হতে কাজ চলছিল।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পৃথক একটি সূত্র জানায়, ঐক্য ইস্যুভিত্তিক হবে নাকি রাজনৈতিক হবে—এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার আলোচনা হয়নি। বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদ থাকার অভিযোগ নিয়ে কওমিভিত্তিক সব দলই সক্রিয়। এক্ষেত্রে এই ইস্যুটিকে সামনে রেখে একটি ঐক্য প্রক্রিয়া করার পক্ষপাতী আলেমরা।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলোই সো”চার। এরইমধ্যে পরস্পরের আয়োজনে সেমিনার ও আলোচনা সভায় যাতায়াত শুর“ করেছেন নেতারা। রোজার পর তারা একসঙ্গে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেবেন। রোজার মাসে মাদ্রাসাগুলোর ছুটি থাকায় বড় কর্মসূচির বিপক্ষে নেতারা। রোজার পর মাদ্রাসা খুললে এবং ততদিনে শিক্ষানীতি নিয়ে সরকারের অব¯’ান না পরিবর্তন হলে বড় কর্মসূচি দেবেন কওমি আলেমরা।

সূত্র জানায়, চলমান এই ঐক্য-প্রক্রিয়াকে সফল করার প্রয়াসে ইতোমধ্যে উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলো এক মঞ্চে একত্রিত হয়েছে। সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে এই জোটের মুখপাত্র মুহা. নাছির উদ্দিন খান। শরিক সংগঠন হিসেবে আছে ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস, ইসলামি ছাত্র খেলাফত, ইসলামি ছাত্রসমাজ, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামিযে ইসলামিয়া, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া এবং খেলাফত ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র সংগঠনগুলোর এই জোট শিক্ষানীতি ২০১০ এবং তা বাস্তবায়নে প্রণীত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর খসড়া অনতিবিলম্বে বাতিল করার কর্মসূচি দিয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন ঐক্য-প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইসলামি ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন একমঞ্চে আসার ব্যাপারে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের একজন জানান, এই প্রক্রিয়ায় ইসলামি ঘরানার বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও যুক্ত করার প্রয়াস চলছে।

জানতে চাইলে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ইসলামি ঐক্যজোটের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, ইসলামি দলগুলোর ঐক্য সময়ের দাবি। আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, রাজনৈতিক জোটের বিষয়ে জানি না, তবে শিক্ষানীতি ইস্যুতে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। সরকারের অবস্থান না পাল্টালে ঈদের পর ইনশাল্লাহ বড় কর্মসূচিতে যাব।

ধারণা করা হ”েছ, আসন্ন ঐক্য-প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইসলামি ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন একমঞ্চে আসার ব্যাপারে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের একজন জানান, এই প্রক্রিয়ায় ইসলামি ঘরানার বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও যুক্ত করার প্রয়াস চলছে। এর বাইরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে কিনা এ নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

জমিয়ত সূত্র জানায়, জমিয়তে দুটো গ্র“প সক্রিয়। একটি জামায়াত-বিএনপিপিন্থী। এটি নিয়ন্ত্রণ করেন জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। অন্যটি হ”েছ নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বাধীন। তার অংশটিই নতুন ইস্যুভিত্তিক জোট হলে নতুন জোটে সক্রিয় হতে পারে। রাজনৈতিক জোট হলে আসা না-আসা নির্ভর করছে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে মুফতি ওয়াক্কাসের বনিবনার ওপর।

যদিও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাছ জানান, প্রক্রিয়া চলছে। কিš‘ সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত রূপরেখা নেই। ইস্যুভিত্তিক কাজ হতে পারে। সাময়িক হতে পারে। রাজনৈতিক ঐকপ্রক্রিয়া হবে—এমনটি মনে করছি না। এই ঐক্য আলাদা জিনিস।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে ইস্যুভিত্তিক ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে এরইমধ্যে নির্বাচনি তৎপরতা শুর“ হলে এর রেশ হয়তো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। বিকল্প ইসলামি জোট—যেটি চলমান অন্য কোনও জোটে যুক্ত হবে না।

জানা গেছে, সরকার পক্ষ কওমি আলেমদের ভিন্ন প্ল্যাটফরম করতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও প্রণোদনা চলছিল দুই বছর ধরে। ওই প্রক্রিয়ার ফলেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসে ইসলামি ঐক্যজোট। এরপর এক সময়ের সরকারবিরোধী হেফাজতে ইসলামও কর্মসূচি থেকে দূরে চলে আসে। বিভিন্ন সরকারি সং¯’ার লোকজন ইসলামি দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ইতোমধ্যে আইজিপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জঙ্গিবাদ রোধে জনমত গঠনে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক। এর আগে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখে এসেছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে ইস্যুভিত্তিক ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে এরইমধ্যে নির্বাচনি তৎপরতা শুর“ হলে এর রেশ হয়তো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এ ধরনের প্রক্রিয়ার কথা আমি জানি না।

বিষয়টিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেন ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। তিনি বলেন, সরকার তো সব সময়ই চায় তার বিরোধী পার্টিগুলোকে কোণঠাসা করে রাখতে। এ কারণে এ ধরনের উদ্যোগ শুর“ হলে সরকার আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *