[আগের পর্বগুলোর জন্য দেখুন #সত্যকথন_৮৭, #সত্যকথন_৮৮, #সত্যকথন_৯১ ও #সত্যকথন_১১০]
.
#তোমাদের_স্ত্রীগণ_তোমাদের_শস্যক্ষেত্র (সূরা বাকারাহঃ ২২৩) এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলাম কি নারীকে ছোট করেছে? (শেষ পর্ব)
.
এখন আপনার মনে হয়ত আবার প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে আয়াতের এই অংশ দ্বারা কি বোঝানো হচ্ছে যেখানে বলা হয়েছে,
فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ
“তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর”।
.
এই আয়াতাংশ প্রকৃতপক্ষে কি বুঝাতে চাচ্ছে? এই আয়াত কি পুরুষকে সহিংস করে তুলছে নারী জাতির উপর? কেড়ে নিচ্ছে নারীর স্বাধিকার? নারীকে পুরুষের কাছে করে তুলছে অসহায়? নাকি এই আয়াত নারী ও পুরুষকে প্রদান করছে যৌনতৃপ্তির অপার অধিকার। খুলে দিচ্ছে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার মধ্যে বিবাদমান শত বাধন।
চলুন একটু সামনে আগাই।
.
আমরা প্রথমেই বলেছি যে, একটি আয়াত সম্পর্কে কেউ যদি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে সেই আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট জানতে হবে, নয়তো সে ভুল বুঝবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ যদি একটু আগ্রহ নিয়ে তাফসীরের যে কোন প্রসিদ্ধ কিতাব থেকে এই আয়াতের শানে নুযূলটির প্রতি একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয়, তাহলে তার সামনে সকল কিছু দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
.
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এই আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট কি?
.
একদা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমি তো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। রাসূল (ﷺ) ওমরকে জিজ্ঞাসা করলেন ব্যাপার কি? ওমর বললেন, রাত্রে আমি আমার সওয়ারী উল্টো করেছি (অর্থাৎ আমার স্ত্রীর পেছনের দিক হতে তার যোনীতে সহবাস করেছি)। রাসূল (ﷺ) কোন উত্তর দিলেন না। পরক্ষনেই ওমরের প্রশ্নের জবাবে এই আয়াতটি নাযিল হয়।
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, মক্কার মুশরিকরা তাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাসের সময় পার্শ্ব নিয়ে তেমন কোন চিন্তা ভাবনাই করতো না। তারা যেই পার্শ্ব দিয়ে তাদের খুশি সেই পার্শ্ব দিয়েই তাদের স্ত্রীদের যোনীতে সহবাস করতো। ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার মুহাজির সাহাবাগণ যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন মক্কা হতে আগত একজন মুহাজির সাহাবী মদীনার একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেন। বিয়ের রাতে সে স্ত্রীকে তার ইচ্ছামত সহবাসের প্রস্তাব প্রদান করেন, কিন্তু স্ত্রী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন যে আমি ঐ একটি নিয়ম ছাড়া অন্য কোন নিয়মে সহবাস করার অনুমতি দেব না। কথা বাড়তে বাড়তে একসময় তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দরবারে গিয়ে পৌছায়। অতঃপর এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
.
{তাবারী, আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ ইবনু জারীর, তাফসীরঃ জামিউল কোরআন, ৪/১৭০-১৭১, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ , প্রকাশকালঃ মে, ১৯৯৪), ইবনু কাসীর, ইসমাঈল ইবনু উমার, তাফসীরুল কোরআনীল আযীম, ২/২১৯-২২১(ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ৫ম সংস্করণ, মার্চ, ২০১১), সুয়ূতী, জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর, তাফসীরে জালালাইন, ১/৪৮৫, (ইসলামিয়া কুতুবখানা, নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা, তা.বি), মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, তাফসীরে নূরুল কোরআন, ২/২৮১-২৮২ ( আল-বালাগ পাবলিকেশন্স, স্যার সৈয়দ আহমদ রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা, ৩য় প্রকাশ, আগস্ট, ২০০৮ ইং)}।
.
আয়াতটির শানে নুযূল আমাদেরকে বলছে, এই আয়াতাংশটুকু নাযিল হওয়ার কারণ হলো মুসলিমদের যৌনমিলনের পদ্ধতি কিরূপ হবে তা স্পষ্ট করে তোলা। ইহুদীরা মনে করতো স্বামী যদি পিছন দিক হতে তার স্ত্রীর যোনিতে সহবাস করে তবে সন্তান হলে তা টেরা হবে। তারা কেবলমাত্র নারীদের সাথে সামনের দিক হতে যোনীতে মিলন করতো। তাদের এই মিথ্যা দাবীকে খণ্ডন করে আয়াতটি নাযিল হয়। কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে এই কথা প্রমাণিত নয় যে, কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর সামনের দিক হতে যোনীতে মিলন না করে পার্শ্ব পরিবর্তন করে তো উৎপাদিত সন্তান টেরা কিংবা বিকলাঙ্গ হবে। তাই কোরআন ইহুদীদের এই দাবির অসারতা প্রমাণ করেছে এবং সাথে সাথে স্বামী ও স্ত্রীকে এই স্বাধীনতা প্রদান করেছে যে, তারা চাইলে যে কোন পদ্ধতিতে একে অপরের সাথে মিলিত হতে পারবে; তবে মিলনের একমাত্র স্থান হবে যোনি। কিন্তু যোনি ব্যাতীত অন্য কোন স্থান ব্যবহার করা যাবে না যেমন মলদ্বার কেননা এটা হারাম।
.
মলদ্বারে গমন করাকে উলামাদের সবাই হারাম বলে গণ্য করেছেন। ঈমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা লজ্জাবোধ কর কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কোন ব্যপারে লজ্জাবোধ করেন না। তাই তোমরা স্ত্রীদের মলদ্বার দিয়ে সঙ্গম করো না।
.
ঈমাম তিরমিজী বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, পুরুষের সঙ্গে পুরুষ সমকাম করলে এবং পুরুষ স্ত্রীর মলদ্বার দিয়ে সঙ্গম করলে তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন না।
.
তাউস (র) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রাযি) কে মলদ্বার দিয়ে সহবাস করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি কি আমাকে কুফরী সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছো?
ঈমাম আহমাদ বর্ণনা করেন যে, আবু হোরায়রা (রাযি) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সে ব্যক্তি অভিশপ্ত যে তার স্ত্রীর মলদ্বার দিয়ে সঙ্গম করে।
.
ঈমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন যে, আবু হোরায়রা (রা) বলেনঃ রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে যথাযথ লজ্জাবনত হও। তোমরা স্ত্রীদের মলদ্বার দিয়ে সঙ্গম করো না।
.
আবূ জাওরীয়া বলেনঃ জৈনেক ব্যক্তি আলী (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন স্ত্রীদের মলদ্বার দিয়ে সহবাস করা সম্পর্কে। আলী (রা) উত্তরে বললেনঃ পেছনে করলে আল্লাহ পেছনে রেখে দেবেন। (অতঃপর বললেন) তুমি কি এই ব্যাপারে আল্লাহর কথা শোন নাই? আল্লাহ বলেছেন, তোমরা এমন নির্লজ্জতার কাজ করেছ, যা তোমাদের পূর্বে সমগ্র বিশ্বের কেউই করে নাই।
.
ইবন মাসউদ (রা), আবূ দারদা (রা), আবু হোরায়রা (রা), ইবনে আব্বাস (রা), আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা), আনাস ইবন মালিক (রা) প্রমুখ বড় বড় সাহাবাদের সবাই স্ত্রীর মলদ্বার দিয়ে সহবাস করাকে হারাম বলে গণ্য করেছেন। আবু হানিফা, শাফেঈ, আহমাদ ইবনু হাম্বাল, সাইদ ইবনু মুসাইয়াব, আবূ সালমা, ইকরিমাহ, তাউস, আতা, সাঈদ ইবনু যুনাইর, উরওয়া ইবন যুনাইর, মুজাহিদ ইবনু যুবাইর, হাসান (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ বড় বড় আলিমগণ এটাকে হারাম বলেছেন।
.
{ইবনু কাসীর, ইসমাঈল ইবনু উমার, তাফসীরুল কোরআনীল আযীম, ২/২২৩-২২৯ (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ৫ম সংস্করণ, মার্চ, ২০১১)}।
.
আমাদের আলোচনার মাধ্যমে এই কথা অত্যন্ত জোরালোভাবেই প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম বিদ্বেষীরা পবিত্র কোরআনের এই আয়াতকে যে অর্থে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় আয়াতটি তার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ প্রকাশ করছে। ড. আজাদের মত লোকেরা এই আয়াত উল্লেখ পূর্বক এ কথা বুঝাতে চান যে এই আয়াতের মাধ্যমে নারীদেরকে কেবলমাত্র পুরুষের কামসামগ্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরুষকে প্রদান করা হয়েছে যৌনাচারের অবাধ স্বাধীনতা আর নারীকে করেছে নিষ্কাম। নারীকে বানিয়েছে পুরুষের জন্য শস্যক্ষেত্র আর পুরুষকে বানানো হয়েছে সেই শস্যক্ষেত্রের ইচ্ছামত ব্যবহারকারী ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
অথচ এই আয়াতটি তাদের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলাম এই আয়াতের মাধ্যমে নারীদের জন্য এমন কোন বিধান প্রণয়ন করে নি; যার দ্বারা নারীর যৌন স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে, তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে তার প্রাপ্য অধিকার হতে, তার কামকে চাপিয়ে রাখতে বাধা প্রদান করেছে। কিংবা এই আয়াতটি পুরুষকে নারীর উপর সহিংস করা জন্য, নারীকে ইচ্ছেমত উপভোগ করার সুযোগ দেয়ার জন্য, নারীকে পুরুষের কামদাসী বানানোর জন্য নাযিল হয় নি। বরং পুরুষ ও নারী যাতে তাদের দাম্পত্য জীবনে যৌনাচার করে পারস্পরিক সন্তুষ্ট হতে পারে সে জন্যে মহান আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেছেন।
.
আমরা উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখেছি যে, ইহুদীরা স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক তৃপ্তিকে সীমাবদ্ধ করেছিল কিন্তু এই আয়াত স্বামী ও স্ত্রীর বৈবাহিক জীবনে যৌনাচারের ক্ষেত্রে তাদের কাম প্রকাশের পদ্ধতিকে সীমাবদ্ধ করেনি বরং কাম প্রকাশের পথকে করেছে উন্মুক্ত। একজন নারী চাইলে তার স্বামীর সাথে পেছন দিক হতে মিলিত হতে পারবে, চাইলে সামনের দিক হতে মিলিত হতে পারবে কিংবা বেছে নিতে পারবে এমন পদ্ধতি যা তার শারীরিক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যশীল। ইসলাম আয়াতের মাধ্যমে নারীকে প্রদান করেছেন যৌন তৃপ্তির অধিকার। ইসলাম তাকে প্রদান করেছে অপার স্বাধীনতা, যেমন স্বাধীনতা প্রদান করেছে একজন পুরুষকে।
.
নারীর উপর একজন পুরুষ যাতে উগ্রতা প্রদর্শনপূর্বক তাকে কষ্ট প্রদান না করতে পারে সেজন্যে স্বামীর জন্যে নিষেধ করা হয়েছে তার স্ত্রীর মলদ্বারে (Anus) সঙ্গম করাকে। কেননা একজন নারীর কাছে মলদ্বারে সঙ্গম করাটা কখনোই আরামদায়ক কিংবা তৃপ্তিকর নয় বরং কষ্টদায়ক ও অসহনীয়ও বটে; সাথে সাথে তা বিভিন্ন ধরণের যৌনবাহিত রোগের (Sexually Transmitted Disease) কারণ।। মলদ্বার ব্যাতীত যে কোন পন্থায় স্ত্রীর যোনীতে (Vagina) মিলন করার ক্ষেত্রে ইসলামের কোন বাধা নেই বরং রয়েছে ব্যক্তির নিজস্ব স্বাধীনতা।
.
পাশাপাশি আমাদের এই আয়াতের শেষাংশও স্মরণ রাখা উচিত, যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُم مُّلَاقُوهُ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
“এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও”।
.
মহান আল্লাহ এই আয়াতাংশের মাধ্যমে এই বক্তব্যও সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মানুষ যেন তাদের কর্মে আল্লাহকে ভয় করে অর্থাৎ এমন কোন কাজ যেন তার দ্বারা সম্পাদিত না হয় যার অনুমতি ইসলাম প্রদান করে নি। যেমনঃ স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ, তার সাথে অবৈধ পন্থায় যৌনমিলন, তাকে তার প্রাপ্য অধিকার হতে বঞ্চিত করা, তাকে কেবল যৌনদাসী হিসেবে বিবেচনা করা ইত্যাদি। পাশাপাশি ইসলাম একজন নারীর প্রত্যহ জীবনকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেছে এবং তা নিয়ে কোন কটু মন্তব্য করে নি, যা নাস্তিক ড. আজাদ করেছেন। তিনি তার বইতে গর্ভবতী নারীকে তুলনা করেছেন গর্ভবতী পশুর সাথে।
ড. আজাদ গর্ভবতী নারীদের সম্পর্কে বলেছেনঃ
“গর্ভবতী নারী অনেকটা দেখতে গর্ভবতী পশুর মতো, দৃশ্য হিসেবে গর্ভবতী নারী শোভন নয়, আর গর্ভধারণ নারীর জন্যে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এক দিন হয়তো গর্ভধারণ গণ্য হবে আদিম ব্যাপার বলে”।
.
[হুমায়ুন আজাদ, নারী, অধ্যায়ঃ ; পৃষ্ঠাঃ ৩৬৩; (আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, ৩য় সংস্করণ, ষষ্ঠদশ মূদ্রণ, বৈশাখ ১৪১৯, মে ২০০৯)]।
.
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মুনিব এবং দাসের মত নয়। বরং ইসলামে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক হল,
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
অর্থঃ “তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ”। (সূরা বাকারাহঃ ১৮৭ আয়াত)
স্বামী কেবল তার যৌনপ্তৃপ্তি লাভ করবে আর নারী তা থেকে বঞ্চিত হবে কিংবা পুরুষ তার স্ত্রীর উপর সহিংস হবে, ইসলামে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক এমন নয় বরং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক হল সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার। মহান আল্লাহ স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করছেন এভাবে,
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ [٣٠:٢١]
আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রুমঃ ২১ আয়াত)।
.
ইসলাম স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসাকে এতটাই গুরুত্বের চোখে দেখেছে যে, স্বামীর জন্যে তার স্ত্রীকে ভালোবেসে মুখে খাবাড় তুলে দেয়াকেও সাদাকাহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্যেও টাকা ব্যয় করে তবুও তা সাদাকাহ রূপে পরিগণিত হয়। রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ قَالَ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ حَدَّثَنِي عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ “إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فَمِ امْرَأَتِكَ
সা’দ ইব্ন আবূ ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেনঃ ‘তুমি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ কর না কেন, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।
{বুখারী, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল, আস-সহিহ, অধ্যায়ঃ (০১), কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদঃ (৪১), আমল নিয়ত ও সওয়াবের আশা অনুয়ায়ী ……… , ১/৫৪}।
.
সুবহানাল্লাহ, এই হাদিস একজন স্ত্রীর সম্মানকে, মর্যাদাকে এতটাই উপরে তুলেছে যে, তার মুখে খাবার তুলে দেয়াকে সাদাকাহ হিসেবে বিবেচনা করেছে। যা নাস্তিকরা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
.
তাই আমরা বলবো ইসলামের বিধান সম্পর্কে, কোরআন কারীমের ব্যাখ্যা সম্পর্কে, আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে না জেনেই কেবলমাত্র একান্ত বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কলম চালনা করাটা কোন জ্ঞানবান লোকের কাজ নয়। এটা মূর্খরা করতে পারে যারা কোরআন কারীমের অন্তত একটি আয়াতও শুদ্ধ করে পড়ার মত যোগ্যতা রাখে না।
.
আমাদের শেষ কথা এটাই ইসলাম নারীকে শস্যক্ষেত্রের সাথে তুলনা করে কোন অযৌক্তিক কাজ করে নি বরং তা চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত (যা ১ম পর্বে আলোচিত হয়েছে) এবং ড. আজাদের উত্থাপিত অভিযোগের মূল কেন্দবিন্দু সূরা বাকারার ২২৩ নং আয়াতটি আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, এই আয়াত নারীকে পুরুষের দাসী হিসেবে, একান্ত সম্ভোগের বস্তু হিসেবে কিংবা পুরুষকে নারীর উপর সহিংস করে তোলার জন্য নাযিল হয় নি; বরং এর প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণই ভিন্ন যা ড. আজাদ উপলব্ধি করতে পারেন নি। তিনি এই আয়াতকে ব্যবহার করে যা বুঝাতে চেয়েছে, এই আয়াত তার সম্পুর্ণ বিপরীত অর্থ প্রকাশ করেছে। এই আয়াত পুরুষ ও নারীকে তাদের প্রাপ্য যৌন অধিকার প্রদান করেছে। সেই সাথে ইহুদীদের মিথ্যা দাবীর অসারতা প্রমান করেছে। পাশাপাশি নারীদের সাথে আচরণের বেলায় মহান আল্লাহকে ভয় করতে নির্দেশ প্রদান করেছে।
.
বস্তুত একমাত্র মহান আল্লাহই সর্বজ্ঞানী।
.
লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ [ফেসবুক id: Jakaria Masud]
Leave Your Comments