ডারউইনিজমের ব্যবচ্ছেদ: পর্ব-৩
.
‘বিজ্ঞানী’ ডারউইনকে আসলেই ‘জীব বিজ্ঞানী’ বলা যায় কিনা তা নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে, বিশেষ করে ডিএনএ’র গঠন জানার পরে তার দেয়া ‘থিওরি’ কোনো মতেই আধুনিক জীব বিজ্ঞানের অংশ হতে পারে না। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান ডারউইন প্রথমে চিকিৎসা শাস্ত্র পড়ার জন্য স্কটল্যান্ডের এডিনবুর্গে যান, পড়াশোনা শেষ না করেই চলে আসেন, তার পিতা প্রচন্ড হতাশ হয়ে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেন যাতে সে রেক্টর বা ক্লারিক জাতীয় সম্মানজনক পদে অধিষ্টিত হতে পারে, সেটা করতেও সে ব্যর্থ হয়, পরে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রী নেন।
.
প্রভাবশালী ও ধনবান পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার পিছনে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করতে পিছপা হননি। নিজ উদ্যোগে জীব বিজ্ঞানের শ্রেণী বিন্যাসের উপরে পড়াশোনা করেন। পরে ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিটজরয়ের নেতৃত্বে জাহাজ এইচ.এম.এস বিগলে করে সারা দুনিয়া চষে বেড়িয়েছেন, বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকার গালাপস দ্বীপে অনেক দিন অতিবাহিত করেন, সেখান কার জীববৈচিত্র, সাথে আদি মানুষদের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করেন, এবং লিখে ফেলেন তার আলোচিত ‘অরিজিন অফ স্পেসিস’ বই।
.
এখানে প্রায়োগিক বিজ্ঞান বলতে কিছু ছিলোনা, পুরোটাই তার মনগড়া নিজস্ব জীবন দর্শন। ডারউইন অবশ্যই প্রচন্ড মেধাবী একজন মানুষ ছিলেন সন্দেহ নাই, কিন্তু কোনো মতেই তাকে আধুনিক বিজ্ঞানের চর্চা অনুযায়ী ‘জীব বিজ্ঞানী’ বলা চলে না।
.
এবার থিওরি বা ‘তত্ত্ব’ নিয়ে কিছু বলা যাক। থিওরি হলো যুক্তি তর্কহীন অনুমান নির্ভর কিছু প্রস্তাবনা, সেটা সঠিক/ভুল যেকোনো একটা হতে পারে। একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, বিজ্ঞানের অন্য সব শাখায় ‘থিওরি’ গ্রহণ যোগ্য হলেও ‘জীব বিজ্ঞানের’ ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারে অপ্রমাণিত ‘থিওরি’ অসাড় একটা জিনিস। পদার্থ বিজ্ঞানে আইনস্টাইনের ‘আপেক্ষিকতার তত্ত্ব’, কম্পিউটার বা টেলিকমুনিকেশনে ক্লাউডে শ্যাননের ‘ইনফরমেশন থিওরি’, প্রায়োগিক গণিত শাস্ত্রের জন নিউম্যানের ‘গেম থিওরি’, রসায়নে লাভসিওরের ‘অক্সিজেন দহন তত্ত্ব’, ম্যাক্স প্লাঙ্কের ‘কোয়ান্টম তত্ত্ব’, স্টাটিস্টিকের টমাস ব্যাসের ‘বেইস তত্ত্ব’ সহ আরো অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে যেগুলো এখনো প্রয়োগসাধ্য ও বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।
.
পদার্থ বা গণিত শাস্ত্রে একটা থিওরী দাঁড় করাতে একটা পেপার আর পেন্সিলই যথেষ্ঠ, পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার পড়ে না, উদাহরণ, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। জীব বিজ্ঞানে আপনি চাইলেই আপনার মন গড়া ‘তত্ত্ব’ বানাতে পারেন না। এক্সপেরিমেন্টাল এভিডেন্স ছাড়া জীব বিজ্ঞান কোনো কিছুই বিশ্বাস করে না।
.
আধুনিক কম্পিউটেশনাল বায়োলজিতে অনেক সময় সিমুলেশন বা ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিংয়ের মাধ্যমে অনেক কিছু প্রেডিক্ট/অনুমান করা হয়, বাস্তবে যখন বায়োলজিক্যাল সিস্টেমে টেস্ট করা হয় তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বানুমান ভুল প্রমাণিত হয়। জীববিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞানের অন্য কোনো শাখা এতো রহস্যময়, জটিল ও বৈচিত্রময় নয়। আরো বলে রাখা ভালো, মানুষ মঙ্গলে পা রাখতে চলেছে, ইলেক্ট্রন, প্রোটন নিয়ে কাজ করছে, রোবট বানাচ্ছে আরো কত অ্যাডভান্স টেকনোলজি আমাদের সামনে, তারপরেও এখন পর্যন্ত আমাদের ডিএনএ র ৯০ ভাগেরও বেশি অংশ কি কাজ তা আমরা জানতে পারিনি । এতো জটিল একটা বিষয়ে একজন মানুষ বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়ে, কিছু বানর, হনুমান, আর জংলী মানুষদের সাথে থেকেই ‘জীব বিজ্ঞানের’ থিওরি দিয়ে দিলো, আর কোটি কোটি মানুষ সেটা এইযুগেও বিশ্বাস করে চলেছে ভাবতেই আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সংকিত হই।
.
এবার জেনে নেই ডারউইনের এভোলিউশনারী থিওরি সম্পর্কে তার সমসাময়িক প্রথিতযশা ও আধুনিক বিজ্ঞানীরা কে কি বলেছেন। বিখ্যাত ডেনিশ এম্ব্রায়োলজিস্ট সোরেন লোভট্রপ তার বই Darwinism: The Refutation of a Myth এ লিখেছেন –
.
“…the reasons for rejecting Darwin’s proposal were many, but first of all that many innovations cannot possibly come into existence through accumulation of many small steps, and even if they can, natural selection cannot accomplish it, because incipient and intermediate stages are not advantageous.”
.
ক্যামব্রিজে পড়াশোনা করা বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ এডাম সিজুইক ডারউইনিজম নিয়ে তামাশা করেছেন –
.
“…parts (of Darwin’s Origin of Species) I laughed at till my sides were almost sore…”
.
ব্রিটিশ বায়োলজিস্ট জর্জ জ্যাকসন এই তত্ত্বকে “The Incompetency of ‘Natural Selection’ বলে অবহিত করেছেন। মার্কিন বায়োলজিস্ট লুইস অগাস্টের মন্তব্য –
.
“There are…absolutely no facts either in the records of geology, or in the history of the past, or in the experience of the present, that can be referred to as proving evolution, or the development of one species from another by selection of any kind whatever.”
.
আরেক বিখ্যাত মার্কিন গণিত ও পদার্থবিদ উলফস্গং স্মিথ তার ‘Teilhardism and the New Religion’ বইয়ে বলেছেন –
.
‘evolutionism is in truth a metaphysical doctrine decked out in scientific garb’.
.
একজন মার্কিন ‘আধুনিক এভোলিউশনারী’ থিওরিস্ট মাইকেল বিহি তার ‘Darwin’s Black Box’ বইয়ে নিও-ডারউইনিজমকে –
.
‘a minor twentieth-century religious sect’ বলে উল্লেখ করেছেন।
.
‘Ultimately the Darwinian theory of evolution is no more nor less than the great cosmogenic myth of the twentieth century’- কথাটা বলেছেন বিখ্যাত ব্রিটিশ বায়োকেমিস্ট মাইকেল ডেনটন তার Evolution: A Theory in Crisis বইয়ে।
.
ডারউইনের সমসাময়িক বিখ্যাত বায়োলজিস্ট, স্যার রিচার্ড ওয়েন তার ‘Darwin on the Origin of Species’ বইয়ে ডারউইনের তত্ত্বকে ধুয়ে দিয়েছেন। এই রকম উদাহরণ অসংখ্য দেয়া যাবে যারা ডারউইনের এই আষাঢ়ে গল্প নিয়ে হাসি তামাশা করেছেন।
.
আরো একটা বিষয় আপনাদের জানানো দরকার, ডারউইনকে ইউরোপ আমেরিকার লোকেরাই বিজ্ঞানী মনে করে না। সাধারণত ইউরোপ আমেরিকাতে বড় বড় বিজ্ঞানীদের নামে বিভিন্ন ধরণের বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়ে থাকে যেমন, স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট, ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট, পাস্তুর ইনস্টিটিউট, সাল্ক ইনস্টিটিউট, গর্ডন ইনস্টিটিউট, ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট, ওয়াটসন স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সাইন্স, এই রকম আরো অনেক নাম দেয়া যাবে যেখানে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদেরকে সন্মান জানানো হয়েছে তাদের নামে নামকরণের মধ্য দিয়ে। অবাক করা বিষয় ডারউইনের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীর (!!) নামে জীব বিজ্ঞানের কোনো ইনস্টিটিউটের নাম করণহয়নি এখন পর্যন্ত!!! তার মানে ডারউইনের দেশের মানুষরাই তাকে বায়োলজি ফিল্ডে বড় কোনো বিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না।
(ইন শা আল্লাহ চলবে)
==============================
লেখকঃ সাইফুর রাহমান
Leave Your Comments