ক্যামেরা
.
Canon, Nikon আর Sony এর মত জায়ান্ট কোম্পানিগুলো নিজেদের ক্যামেরার Autofocus Sensor সবসময় আপগ্রেড করার চেষ্টায় রত থাকে। নিরলস চেষ্টা, লক্ষ মাপামাপি, প্রোগ্রামিং আর কোটি কোটি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্য দিয়ে ক্যামেরাগুলোর Autofocus Sensor অনেক উন্নত আর দারুণ হয়ে উঠেছে।
.
আগেকার কিছু ক্যামেরায় ফোকাস করতে Sonar এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার হতো। একটা শব্দ যেয়ে ফিরে আসলে সেখান থেকে focal object কতদূরে রয়েছে তা ধারণা করে লেন্সের focal length বাড়িয়ে কমিয়ে ফোকাস করা হতো। এরও আগে প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যানদের একজন সাহায্যকারী দরকার হতো যে কিনা দড়ি দিয়ে ক্যামেরা আর Focal object এর দূরত্ব মেপে ক্যামেরাম্যানকে জানাতো! আর এরপর ক্যামেরাম্যান হিসেব কষে ফোকাস করতেন। এখনকার আধুনিক ক্যামেরাগুলো Contrast, Sharpness ইত্যাদি মাপামাপি করে নিখুঁত প্রোগ্রাম করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফোকাস করে থাকে।
.
কিন্তু এখনও সবচেয়ে অতাধুনিক ক্যামেরার Autofocus কীভাবে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে হবে সেবিষয়ে Tutorial ভিডিও আসে। কোনো ক্যামেরার টাচস্ক্রিনে Focus area তে টাচ করলেই হয় তো কোনো ক্যামেয়ায় ছবি তোলার আগ মুহুর্তে বাটন দিয়ে Focus area নির্ধারণ করে দেওয়া লাগে। সাধারণত ছবির কোণায় থাকা বস্তু এত কসরত করে ফোকাস করা হয়।
.
অথচ চোখ Focusing করে আসছে শতসহস্র বছর ধরে। অন্যসব প্রাণির চোখ বাদ দিলাম, মানুষের চোখও প্রায় Instant focus করে থাকে (সেকেন্ডের ৩ ভাগের ১ ভাগ সময়ে)। এই মুহুর্তে স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকা মানুষটি স্ক্রিনের পিছনে তাকালে সাথে সাথে Focus হয়ে যায়। আবার ফিরে তাকালে আবারও এখানে ফোকাস। এছাড়াও ক্যামেরার লেন্সগুলো হয় ঢাউস আকৃতির আর সেখানে কাঁচ সামনে পিছনে করে ফোকাস করতে হয়। অথচ চোখের ফোকাসিং কিনা হয় লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করে! (আধুনিক ক্যামেরার তুলনায় মানবচোখের কিছু ফিচার প্রথম কমেন্টে লক্ষণীয়)
.
শুধু মানুষের চোখের মত এত জটিল, এত উন্নত ফোকাসিং যে জিলিয়ন বছরের বিবর্তনেও সম্ভব না, বরং একজন Intelligent Designer এরই ডিজাইন করা সেটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। এই তো গেল কেবল মানুষের চোখের কথা; ঈগলের চোখ তো মাইল দূর থেকেও ছোট জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায়। একটা তুলনায় দেখা গিয়েছে, মানুষের এমন চোখ থাকলে দশ তলা সমান বিল্ডিংয়ের উপর থেকে ছোট পিঁপড়ে স্পষ্ট দেখতে পেত।
.
চোখের ব্যাপার নিয়ে ডারউইনও লিখতে বাধ্য হয়েছিল। On the origins of Species এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে সে লিখেছে –
“To suppose that the eye with all its inimitable contrivances for adjusting the focus to different distances, for admitting different amounts of light, and for the correction of spherical and chromatic aberration, could have been formed by natural selection, seems, I freely confess, absurd in the highest degree.”
অর্থাৎ সহজভাষায় – চোখের ফোকাসিং, আলোক নিয়ন্ত্রণ এতসবকিছুর কার্যকলাপ সুচারুরূপে সম্পন্ন হওয়ার মত বিষয়টি, স্বীকার করতেই হয়, ন্যাচারাল সিলেকশানের নামে চালিয়ে দেওয়া সবচেয়ে অযৌক্তিক বলে মনে হয়।
.
ডারউইন সত্যের কোনো দলিল নয়, দলিল নয় কোনো থিউরি বা বক্তব্যও। ডারউইনের এই বক্তব্যটুকু অনেকেই Creationism এর পক্ষে দলিল হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ এই বিষয়ে সে অতটুকু বলেই থেমে যায় নি। বরং লম্বা ফিরিস্তি দিয়েছে, ন্যাচারাল সিলেকশনের অসম্ভবকে সম্ভব করার অবৈজ্ঞানিক ফিরিস্তি। [১]
.
.
কিছু বিবর্তনবাদী মানুষের চোখ কি ‘নিখুঁত’ সেই প্রশ্ন করে চলে যায় অন্যদিকে। ঈগলের চোখ বা অক্টোপাসের চোখ আরও বেশি কর্মক্ষম, নিখুঁত সেসব বর্ণনা দিয়ে তারা জাহির করে বেড়ায় যে মানুষের চোখ মোটেও ‘নিখুঁত’ বা ‘উন্নত’ নয়। ভাষার মারপ্যাঁচ ব্যবহার করে আলোচনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা যেন তাদের রক্তে।
.
মানুষের চোখ নিখুঁত এই দাবি কেউ করে নাই। বরং চোখে আলো প্রবেশ করা, সেগুলো রেটিনায় উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি করা, সেই প্রতিবিম্ব আবার নিউরন কর্তৃক মস্তিষ্কে পৌঁছে দেওয়া, মস্তিষ্কে পৌঁছে উল্টো প্রতিবিম্ব আবার সোজা হয়ে গিয়ে শেষমেশ দেখার অনুভূতি তৈরি করা – এত এত ব্যাপার স্যাপার, এত কারসাজি যে প্রয়োজনানুযায়ী সুচারুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে সেই প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে এতসব প্রক্রিয়া এত সুন্দর করে হওয়ার মেকানিজমের কথা।
.
‘মানুষের চোখ Perfect না, এর থেকেও উন্নত চোখ প্রাণিকূলে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উন্নত আর নিখুঁত চোখ অক্টোপাসের চোখ, সুতরাং এসব চোখের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, এগুলো একা একাই বিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন মানের হয়েছে’ – এসব কথাবার্তা এই কথাগুলোর মতোই অসার – Canon 70D ক্যামেরা Perfect ক্যামেরা নয়, এর থেকেও উন্নত Canon 80D, 1D ইত্যাদি রয়েছে। সুতরাং কোনো ক্যামেরারই কোনো Designer, Manufacturer নাই।
.
‘মানুষ নিখুঁত সৃষ্টি না’ এই দাবির পিছনে আরেকটা মেসেজ থাকে। আর সেটা হল – অতএব মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত না। অথচ মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ তার ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যেকটি ফিচারের জন্য করা হয় নাই, বরং সমস্তটা মিলে যে মানুষ, সেই মানুষকে সকল সৃষ্টির সেরা বলা হয়েছে। মানুষ তার মেধা, বুদ্ধি, দর্শন সবকিছু দিয়ে অন্যসবকিছুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে সেকারণে বলা হয়েছে। কিন্তু ডকিন্সরা লেকচারে আর জাফর ইকবালরা সায়েন্স ফিকশনগুলোতে যখন বিবর্তনের সাফাই গেয়ে মানুষের চোখ বিবর্তিত হয়ে (!) এখনও পুরোপুরি নিখুঁত হয়ে উঠে নাই টাইপের মেসেজ দিয়ে দেয় [২] তখন শিশু মনগুলো ভেবে বসে তবে তো বিবর্তনই সত্য, তাদের মনে প্রশ্ন উঠে তবে কীভাবে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়, তখন যুক্তির ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার মতো কেউ থাকে না।
.
বস্তুত, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ আর ‘সৃষ্টিজগতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ’ এক জিনিস নয়। আগামী দশ বছর পরের Canon 54321D মডেল বের করা মানে এই নয় যে এখনকার অপেক্ষাকৃত কম উন্নত 70D মডেলের কোনো Manufacturer নাই। এখনকার এই মডেলেই যে পরিমাণ জ্ঞান-বিজ্ঞান আর শ্রম প্রয়োগ করা হয়েছে তাই যদি এর পিছনে Manufacturer থাকার নির্দেশ করে, তবে চোখের ওই ছোট্ট কোটরে ক্রমাগত লেন্স আকিয়ে বাঁকিয়ে এই মুহুর্তে আপনার দেখার অনুভূতি সৃষ্টি করা, প্রয়োজনে লেন্সক্যাপ (চোখের পাতা) আর লিকুইড দিয়ে চোখকে ক্রমাগত রক্ষা করার মত কুশলী তো একজন Intelligent Design এর দিকেই ভিড়ায়।
.
মু’মিন অর্থাৎ, বিশ্বাসীদের জন্য কিন্তু সত্যমিথ্যা নির্ণয়ে রব্বের কথাই যথেষ্ট হয়। আর বাকিরা সত্য পেয়েও কথা পেঁচায় যেমনটা ডারউইন করেছিল, করছে এখনকার ডারউইনবাদীরা। [১]
“শীঘ্রই আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; যাতে তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে এটা সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? ”
(সূরা ফুসসিলাত, ৫৩)
———————–
.
লেখকঃ তানভীর আহমেদ
.
#সত্যকথন
.
———————–
.
[১] To suppose that the eye with all its inimitable contrivances for adjusting the focus to different distances, for admitting different amounts of light, and for the correction of spherical and chromatic aberration, could have been formed by natural selection, seems, I freely confess, absurd in the highest degree. When it was first said that the sun stood still and the world turned round, the common sense of mankind declared the doctrine false; but the old saying of Vox populi, vox Dei, as every philosopher knows, cannot be trusted in science. Reason tells me, that if numerous gradations from a simple and imperfect eye to one complex and perfect can be shown to exist, each grade being useful to its possessor, as is certainly the case; if further, the eye ever varies and the variations be inherited, as is likewise certainly the case; and if such variations should be useful to any animal under changing conditions of life, then the difficulty of believing that a perfect and complex eye could be formed by natural selection, though insuperable by our imagination, should not be considered as subversive of the theory. How a nerve comes to be sensitive to light, hardly concerns us more than how life itself originated; but I may remark that, as some of the lowest organisms, in which nerves cannot be detected, are capable of perceiving light, it does not seem impossible that certain sensitive elements in their sarcode should become aggregated and developed into nerves, endowed with this special sensibility.
– On the origins of Species, Chapter 6
.
এখানে ডারউইন প্রথমে চোখের এমন কুশলী ন্যাচারাল সিলেকশনে বিবর্তনে হওয়া সম্ভব না বলে মনে হয় বলে স্বীকার করে। কিন্তু তারপর তা মানুষের জ্ঞানের স্বল্পতা বলে চালিয়ে দিল। বলল এখন নাকি আমরা চিন্তা করতে পারছি না। ‘এমনিই এমনিই হয়ে গেছে’ এমন রূপকথায় আমাদেরকে বিশ্বাস রাখতে বলল। কীভাবে হয়েছে তা বিজ্ঞান একসময় ব্যাখ্যা করবে। কিন্তু কেন হয়েছে সেটা? কেন এমনই হল সেটার উত্তর বিজ্ঞান কখনও বলে না। ‘কেন’ এর উত্তর সবসময় ‘এমনিতেই হয়েছে আর কি!’
.
[২] অক্টোপাসের চোখ, ডক্টর জাফর ইকবাল। এই সায়েন্স ফিকশনটিতে মানুষের Individual Feature পারফেক্ট না আর এটা বিবর্তনের ধারাতে আরও নিখুঁত হতে পারতো এমন একটা মেসেজ দেওয়া হয়েছে। যদিও শেষমেশ মানুষের নিজের ডিজাইন করা ত্রুটিবিহীন মানুষে সভ্যতার পরাজয় দেখানো হয়েছে, কিন্তু বিবর্তনবাদ সত্য ধরে নিয়ে ন্যাচারাল সিলেকশনে যা অর্জিত হয়েছে সেটাই ভাল এমন মেসেজ থেকেই গেছে। কখনও মেসেজ এমন হয় নাই যে সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তই ভাল।
Leave Your Comments