কুরআন কী করে স্রষ্টার বাণী হয় যেখানে এতে বিভিন্ন প্রার্থনামূলক বাক্য আছে?

কুরআন কী করে স্রষ্টার বাণী হয় যেখানে এতে বিভিন্ন প্রার্থনামূলক বাক্য আছে?
===============================================
.
#নাস্তিক_প্রশ্ন: সুরা ফাতিহা’র (Quran 1:1-7) আয়াতগুলো দ্বারা মুহম্মাদ কর্তৃক আল্লাহর প্রশংসা করাটাকেই বোঝায়! তাহলে কুরআন কি করে আল্লাহর পাঠানো বানী হতে পারে?
.
#۞উত্তরঃ ﺑِﺴْﻢِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﻟﺮَّﺣْﻤَـٰﻦِ ﭐﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
ﭐﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﭐﻟْﻌَـٰﻠَﻤِﻴﻦَ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
ﭐﻟﺮَّﺣْﻤَـٰﻦِ ﭐﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
﴿٣﴾
ﻣَـٰﻠِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِ
যিনি বিচার দিনের মালিক।
﴿٤﴾
ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
﴿٥﴾
ﭐﻫْﺪِﻧَﺎ ﭐﻟﺼِّﺮَٰﻁَ ﭐﻟْﻤُﺴْﺘَﻘِﻴﻢَ
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
﴿٦﴾
ﺻِﺮَٰﻁَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏَﻴْﺮِ ﭐﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﭐﻟﻀَّﺂﻟِّﻴﻦَ
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
﴿٧﴾
.
যদি এই কারনেই কুরআন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কথা/কালাম না হয় তাহলে নিম্নের আয়াতটি সম্পর্কে কি মত দেওয়া যেতে পারে??
ﻭَﺇِﺫْ ﺗَﺄَﺫَّﻥَ ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻟَﺌِﻦ ﺷَﻜَﺮْﺗُﻢْ ﻟَﺄَﺯِﻳﺪَﻧَّﻜُﻢْ ۖ ﻭَﻟَﺌِﻦ ﻛَﻔَﺮْﺗُﻢْ ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑِﻰ ﻟَﺸَﺪِﻳﺪٌۭ
অনুবাদঃ যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (সূরা ইবরাহীম ১৪ঃ৭)
.
এখানে তো আল্লাহ আমি সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। এছাড়া ও এরকম আয়াত অসংখ্য আছে {(সূরা কাহফ ১৮ঃ৯৯-১০২), (সূরা ইবরাহীম ১৪ঃ৪-৫), (সূরা বাকারাহ ২ঃ২৩) (সূরা যুমার ৩৯ঃ ২), (সূরা আনকাবূত ২৯ঃ৬৯)} এ আয়াতগুলোই কি উক্ত প্রশ্নের খন্ডনের জন্য যথেষ্ট নয়?
.
এখন আসা যাক সূরা ফাতিহার ব্যাপারে। অভিযোগ এসেছে যে, সূরা ফাতিহার বর্ননাভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রশংসা করছেন নিজের ভাষায় তাই কুরআন যেহেতু আল্লাহর কথা তাই তাতে মানুষের কথার মতো ভঙ্গি থাকতে পারে না। কিছু কথা-
.
(১) কুরআনুল কারীম সম্পূর্ন বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েত হিসেবে এসেছে। আর কুরআনে আছে মানুষেরই আলোচনা (সূরা আম্বিয়া ২১ঃ১০) যাতে মানবজাতি কুরআন পড়তে, বুঝতে এবং তার থেকে হিদায়াত পেতে পারে।
.
(২) সূরা ফাতিহা একটি দুয়া, আর দুয়া হলো যার মাধ্যমে কোনো কিছু চাওয়া হয়। তাই তো সূরা ফাতিহার এক নাম সূরাতুদ দুয়া (সূরা ফাতিহার তাফসীর, মাওলানা আব্দুর রহীম, পৃ-১৮) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে অনেকগুলো আয়াত নাযিল করেছেন যার বিষয়বস্তু দুয়া বা প্রার্থনা। সেই দুয়াগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে সেখানে রব্বানা বা রব্বি অর্থাৎ আমাদের রব বা আমার রব ইত্যাদি সম্বোধন এসেছে যাতে মানবজাতিকে দুয়া করানো শিখানো হয়েছে।
.
(৩) সূরা ফাতিহা কুরআন নামক শহরের প্রধান ফটক। তবে সূরা ফাতিহা তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারনে এতোটাই বৈশিষ্ট্যপূর্ন যে পরিপূর্ন কুরআনকে এই সাত আয়াতের মধ্যে সংক্ষিপ্ত করা যায় এককথায় বলা যায়, সূরা ফাতিহা যেমন একদিক দিয়ে কুরআনের ভূমিকা তেমনি বলা যায় তা গোটা কুরআনের সারমর্মও বটে অন্যভাবে গোটা কুরআনই এই ছোট্ট সূরাটিরই ব্যাখ্যা।
.
এখন সূরা ফাতিহার বর্ননাভঙ্গির বিশ্লেষন করা যাক-
.
(ক)সূরা ফাতিহা আল্লাহর কালাম হওয়া সত্ত্বেও একে রাখা হয়েছে প্রার্থনামূলক। আল্লাহর কাছে কোন জিনিসের প্রার্থনা করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, তার প্রনালী কেমন হওয়া উচিত, সত্যিকারের সঠিক পথ কোনটি ইত্যাদি বিশ্বমানবের সামনে তুলে ধরা হয়েছে (কুরআনুল কারীম বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ড আবু বকর জাকারিয়া, পৃ-৪) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানুষকে তার নিজের ভাষায় দুয়া করাতে শিখানোর জন্যই মানুষের মত ভঙ্গি করে বলেছেন। যেমনঃ কোনো শিক্ষক তার ক্লাসের ছাত্রদের কাছ থেকে যা শুনতে চান তা নিজেই অনেক সময় বলে দেখান যে তিনি মূলত ছাত্রদের কাছ থেকে কোন কথা কিভাবে, কোন ভঙ্গিতে ও কোন ভাষায় শুনতে চাচ্ছেন। ব্যাপারটি আরো ভালোভাবে বুঝার জন্য একটি উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। এক বাবা বাসায় ফিরে দেখলেন যে তার ছোট্ট বাচ্চাটি খেলছে যে কয়েকদিন ধরে আধো আধো বোল বলা শিখেছে, তাই বাবাটি তার বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বাচ্চাটির মুখ থেকে আব্বু ডাক শোনার জন্য নিজেই বারবার বলে চলছেন” বল, বাবা “আব্বু, আব্বু, আব্বু” এখন বাচ্চাটি যদি তার বাবার থেকে শুনে আব্বু আব্বু ডাক দেয় তাহলে কি এই কথা বলা যাবে যে বাবাটি আব্বু আব্বু কেন বলবে?? এটা তো ওই বাবার কথা হতেই পারেনা। এটাত ওই বাচ্চারই কথা!!!
.
(খ) একটি বইয়ের ভূমিকায় সাধারনত লেখকের পরিচয় বা বইটি লেখার উদ্দেশ্য, বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সামান্য ধারনা পায় যা সাধারনত লেখা থাকে লেখকের নিজের ভাষায় তবে এই ক্ষেত্রে কুরআনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল পাঠক যাতে এর নাযিলকারী আল্লাহর সামান্য পরিচয়, নাযিলকারীর সাথে পাঠকের সম্পর্ক, পাঠক এই বইটি থেকে পরবর্তীতে কি পেতে যাচ্ছে এবং সাথে সাথে বইটি থেকে সত্যিকারের উপকার হাসিল করতে চাইলে কী করতে হবে এইগুলো পাঠকের নিজের ভাষায় প্রার্থনা বা দুয়ারুপে বর্ননা করা হয়েছে যাতে পাঠক ভূমিকা থেকেই বইটির সাথে নিজের অন্তরের সাথে সূক্ষ্ণ একাত্মতা খুজে পায়। যা পাঠককে কুরআনের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে সাথে সাথে কুরআন থেকে উপকার পেতে সহায়ক করবে।
.
(গ) কুরআন যেহেতু বিশ্বমানবের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে তাই কুরআনের ভূমিকা সূরা ফাতিহার ভাবটিই এমন রাখা হয়েছে যা এর পাঠককে অবহিত করবে এই বই কার পক্ষ থেকে এসেছে, তার পরিচয়, সাথে সাথে এই বইটি থেকে সরল সঠিক পথের সন্ধান হলে পেতে তার অন্তরকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে। তাই সূরা ফাতিহার মাধ্যমেই আল্লাহর নিকট থেকে যারা সঠিক পথ পেয়েছেন তাদের মতো সরল, সোজা ও সঠিক পথ পাওয়ার প্রার্থনা এবং যারা এই পথ থেকে ছিটকে গেছে তাদের মতো হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা যায় কারন সূরা ফাতিহা হলো একটি প্রার্থনা আর পুরো কুরআনই হলো তার উত্তর।
.
(ঘ) মানুষ যখন আল্লাহর কালাম বা বানী তাদের অন্তরের সুপ্ত দুয়ারুপে পাঠ করবে তা পাঠককে আল্লাহর আরো নিকটবর্তী করে তুলবে যা কুরআনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
.
(ঙ) এটা অনেক চোখ থাকতেও অন্ধের মতো ব্যক্তিদের কাছে কুরআনের ত্রুটি মনে হলেও সত্যিকার অর্থে এটি কুরআনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা কুরআনকে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে স্বতন্ত্র করে তা হলো এতে মানুষ নিজের আলোচনা পাবে, কখনো নিজের অন্তরের সুপ্ত কথাটিই কুরআনের পাতায় পাবে, কখনো মনে হবে কুরআন তার নিজের মনের মত করেই একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে,কখনো বা নিজের অন্তরের দুয়াটিই কুরআনের পাতায় পাবে যা তাকে সত্যই আল্লাহর সাথে কথা বলার স্বাদ দিবে। এটি কুরআনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
.
(চ) সূরা ফাতিহা যেহেতু প্রতি সালাতের প্রথমেই পাঠ করা বাধ্যতামূলক(বুখারী, কিতাবুল আযান, হা-৭২০) তাই সূরা ফাতিহার ভাবটি এমনই রাখা হয়েছে যাতে সালাত পড়ার সময় এর পাঠকারী আল্লাহর প্রশংসা, তার মহানত্ব, তার মহাশক্তি বর্ননা করতে পারে সাথে সাথে তারই কাছে সবচেয়ে সরল, সোজা ও সঠিক পথের দিশা চেয়ে প্রার্থনা করা যেতে পারে যা একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন।
.
কুরআনকে তারা যেভাবে একটি সাধারন বইয়ের মত করে দেখে বা দেখানোর চেষ্টা কুরআন তার থেকে অনেক উর্দ্ধে ও অনেক উচ্চ তার উদ্দেশ্য।
.
লেখকঃ হোসাইন শাকিল
[ফেসবুক id: Hossain Shakil]

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *