কুরআনে কি আসলেই অসম্পূর্ণ পানিচক্রের বিবরণ আছে? [ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার]

“তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।”
(কুরআন, নাহল ১৬:১০)
.
“তুমি কি দেখোনি যে আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে ”
(কুরআন, যুমার ৩৯:২১)
.
“তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন। ফলে উপত্যকাসমূহ তাদের পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তার উপরের আবর্জনা বহন করে। এরূপে আবর্জনা উপরে আসে যখন অলঙ্কার বা তৈজসপত্র নির্মাণের উদ্যেশ্যে কিছুকে আগুনে উত্তপ্ত করা হয়। এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন। যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। এভাবে আল্লাহ উপমা দিয়ে থাকেন।”
(কুরআন, রা’দ ১৩:১৭)
.
কুরআনের আয়াতগুলো থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে পানিচক্রের সবগুলো ধাপই অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব যারা দাবি করে কুরআনে অসম্পূর্ণ পানিচক্র বর্ণণা করা হয়েছে, তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হল। সপ্তম শতকের মানুষ তাদের উপযোগী শব্দমালা থেকে এই আয়াতগুলো থেকে জ্ঞানলাভ করেছে; বর্তমান যুগের বিজ্ঞান জানা মানুষ দেড় হাজার বছর আগের একটি গ্রন্থে পানিচক্রের এমন বিবরণ দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে কুরআনের অসাধারাণত্ব স্বীকার করে নিচ্ছে।
.
‘বিজ্ঞানমনষ্ক’(?) হবার দাবিদার কুরআন-বিরোধীদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, সপ্তম শতাব্দীতে যখন কুরআন নাযিল হয়, তখন পানিচক্র নিয়ে মানুষের নানা ভ্রান্ত ধারণা ছিল। এ বিষয়ে ২জন বিশেষজ্ঞ জি গাসটানী ও বি ব্লাভোক্স বিশ্বকোষে (ইউনিভার্সালিস এনসাইক্লোপিডিয়া) প্রাচীনকালের পানিচক্র বিষয়ক মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তারা বলেছেন – প্লেটো বিশ্বাস করতেন যে মাটির নিচে কোন গভীর সুরঙ্গপথ(টারটারাস) দিয়ে পানি মাটির নিচ থেকে সাগরে ফিরে যায়।অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ মতবাদের অনেক সমর্থক ছিলেন এবং তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ডেসকার্টেস। এরিস্টোটল মনে করতেন যে, মাটির নিচের পানি বাষ্প হয়ে পাহাড়ী এলাকার ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে ভূগর্ভে হ্রদ সৃষ্টি করে থাকে এবং সেই পানিই ঝর্ণার আকারে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ মতবাদ সেনেকা(১ম শতাব্দী) ও ভলগার এবং আরো অনেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত পোষণ করতেন। ১৫৮০ সালে বার্নার্ড পালিসি পানির গতিচক্র সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা গঠন করেন। তিনি বলেন যে, মাটির নিচে যে পানি আছে তা উপর থেকে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে আসা। সপ্তদশ শতকে ম্যারিওট এবং পি পেরোন্ট এ মতবাদ সমর্থন ও অনুমোদন করেন।
আল কুরআনে বর্ণিত আয়াতগুলোতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সময়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলোর লেশমাত্রও নেই।
.
=========================
তথ্যসূত্রঃ
[১] দেখুন, The Atmosphere, Anthes and others, p. 268-269, এবং Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141.
[২] দেখুন, The Atmosphere, Anthes and others, p. 269, এবং Elements of Meteorology, Miller and Thompson, pp. 141-142.
[৩] Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141.
=========================
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার

Leave Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *