অনেক দিনের জমানো কথা! যার মোতাকাল্লেম আমার ভেতরের আমি! মোখাতব প্রথমে আমি তারপর আমরা!
তিক্ত হলেও সত্য যে আমাদের অনেক ছাত্র ভাই কাওমী মাদরাসায় কম-বেশি লেখাপড়া শেষ করে সরকারী মাদরাসা বা স্কুল কলেজে পরীক্ষা দিতে চলে যায়! আবার অনেকেই চরম বিরোধীও হয়ে ওঠে! এ প্রবণতা অনেক আগ থেকে চলে আসছে! এটাকে কেন “প্রবণতা” শব্দে প্রয়োগ করেছি সেটা পরে স্পস্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ! জীবনের এ টার্নিং পয়েন্টে যদিও আমাদের ছাত্র ভাইদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে ক্যারিয়ার গঠন কিন্তু ইতোমধ্যে যে লাইনচ্ছুত হওয়ার ঘটনা ঘটে নি তা অবশ্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না! এক্ষেত্রে আধুনিক শিক্ষার জন্য নিজেদের অনাগত কর্মস্থলকে বেগবান করতে গিয়ে সুস্থ পরিবেশের অভাবে চারিত্রিকভাবে কিছু ছাত্র ভাই যেমন শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তার বিপরীত বেশির ভাগ ছাত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে!
কাজেই মাদরাসায় আধুনিক শিক্ষা কোর্সের ব্যবস্থা থাকলে এরা ঘর থেকে বের হতো না এবং এদের গায়ের পোষাক বা প্রত্যক্ষ লেবাস জেনারেল সিস্টেম বা আপত্তিকর হতো না! সর্বোপরি সুন্নতের অমর্যাদাও তাদের জীবনের গলিতে ঠাঁই পেত না! এখানে সরকারেরও হস্তক্ষেপ আসার প্রশ্ন উঠতো না!
আমাদের শিক্ষা অর্জনের শেষ ফলাফল যদিও হাসপাতালের রুগীকে সার্ভিস দিচ্ছে না কিন্তু রুগীর ইন্তেকাল পরবর্তী তাকে যে গোসল কাফন জানাজা দাফনের সার্ভিস দিচ্ছে সেটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ না থাকলেও মাঝে মধ্যে সুযোগটা তৃতীয় পক্ষের কপাল ভাজের কারণ হয়ে দাঁড়ায়! তাই বলে হাসপাতালের ডাক্তার হওয়া কি আলেমের জন্য নিষেধ? কোর্ট আদালতে হেদায়া নিয়ে কোনো আলেমের উপস্থিতি কি বেমানান? রাষ্ট্রীয় সেক্টরে আলেম না থাকলে যে পরিস্থিতি হয় তা অবশ্যই আমাদের চোখে মাঝে মধ্যে দলিলের চশমা ভেদ করে অপ্রাপ্তির ইঙ্গিত দিয়ে যায়!
প্রশাসন পর্যায়ে আমাদের কোনো আলেম নেই! নেই সংসদ বা মন্ত্রণালয়ে! এর ফলে হঠাৎ হঠাৎ হলুদ মিডিয়াগুলোর বাঁশমারা সমাচার কাওমী অঙ্গনকে হেস্তনেস্ত করে ছাড়ে! ফলে এ শূন্যতায় কী লাভ কী ক্ষতি তা চলমান সমাজের দিকে তাকালে সহজে প্রণিধানযোগ্য! আলেমগণ তো এমন হওয়া চাই, তাঁরা যেখানেই যান না কেন সেখানে ঈমানী উজ্জ্বলতা, আমলী স্নিগ্ধতা, খাদেমী মন মানসিকতার পরিবেশ বিরাজ করবে! যেখানে তাদের আগমন ঘটবে সেখানে সবাই তাদের মতো হয়ে যাবে! মারামারি হানাহানি আর পাপাচার অনায়াসে বন্ধ হয়ে যাবে! অথচ এখন সম্মানের জায়গায় মানহানী! তাই ইলম আর হিলমের পাশাপাশি যদি অর্থ কড়ি থাকে তাহলে কি তিনি এবং তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি নষ্ট হয়ে যাবে?
সুতরাং মূল বিষয় হলো হযরত শায়খু্ল হিন্দের চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়ে উসূলে হাস্তেগানার ভিত্তিতে ওলামায়ে ইসলাম ইতিবাচক কোনো পথ আবিষ্কার না করলে (আল্লাহ না করুক) বোখারা সমরকন্দ তাসখন্দের মতো পরিস্থিতির অপেক্ষা করতে হবে আমাদের! যেখানে যুগকে না বুঝে সময়ের সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ইমাম বোখারীর দরসগাহ ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত হওয়ার মতো বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে আমরা কী? বড় বড় দু একজন শহর কুতুব ছাড়া আমরা হিন্দুস্তানের ধারে কাছেও নেই! মূলত আমরা যে পরিমাণ বাচাল এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ তার চেয়েও বেশি পরশ্রী কাতর! বলা যায় কয়েকটা কারণের মধ্যে এটাও আমাদের পেছনে পড়ার একটা মূল কারণ!
স্পেনের ইতিহাস তো আমাদের সামনে একেবারেই স্পষ্ট যে, ইমাম কুরতুবী রহ. এর তাফসীরে কুরতুবীর মতো বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থও টিকিয়ে রাখতে পারে নি তাদের আটশত বছরের সোনালী শাসনকে! এগুলো বলার উদ্দেশ্য একটাই যে, যুগ সচেতনতা না থাকলে যুগ জাতিকে গিলে খাবে! আলেমের গলা কাটা মাথা দিয়ে মিনার নির্মিত হবে! সিপাহী বিপ্লবের মতো প্রতিটি বৃক্ষ হবে আলেমের লাশ ঝুলানো ভয়ংকর চিত্র! আহলে ইলমদের হত্যা করা হবে বিশ্বসন্ত্রাসের নাম দিয়ে! এ জন্যই মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. অসচেতনদের সচেতন করার জন্য বলে গেছেন
“একটি তুফানের মোকাবেলা করার জন্য এর চেয়ে আরেকটি শক্তিশালী তুফানের দরকার!” সুতরাং কারো স্বীকৃতির দিকে না তাকিয়ে আমরা আমাদের মতো মাদরাসাগুলোতে আধুনিক শিক্ষার বিকাশ ঘটালে দোষ কোথায়? প্রয়োজন শুধু একটু নিয়ন্ত্রণ! ড. মাহাথির আর এরদোগানের মতো একজন মানুষ যদি একটি দেশ নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বকে চমকে দিতে পারেন আমরা কেন একটা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না?
কেউ যদি শিক্ষাব্যবস্থায় বিস্তারিত কোনো ইতিবাচক সিস্টেম বা ফর্মুলা অবলম্বন করতে চায় তবে তাকে মাদরাসা দারুর রাশাদের সিলেবাস সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরী! সমালোচনা না করে কাজে লেগে থাকলে সফলতা এমনিতেই ধরা দেবে! তখন সফলতার পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে তাকে নিক্ষিপ্ত হতে হবে! সুতরাং বিতর্কিত বিষয়ে নেতিবাচক মতের তুফান না ঘটিয়ে কর্মের ময়দানে লেগে গেলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের আশা করা যায়! অন্যথায় (আল্লাহ মাফ করুন) আমরা যেভাবে আমাদের শত্রুতে পরিণয় হতে চলেছি আগামীতে আর বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হবে না!
কবিতার ভাষায়-
তুই কেন তোর শত্রু হলি চরম আত্মঘাতি?
তোর কারণে তোর ঘরে আজ চলছে হাতাহাতি!
আল্লাহ আমাদের লাঞ্চিত না করে হেফাজত করুন!
১৬ অক্টেবর ২০১৬
রাত ১টা ৩০ মিনিট
Leave Your Comments