ইসলামে দাসপ্রথা ৩ [প্রথম দুটি পর্বের জন্য দেখুন #সত্যকথন_৮৪ এবং #সত্যকথন_৮৫]
.
এই পর্বে ইসলামকে আঘাত করার ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য কমিউনিস্ট, সোশ্যালিস্ট, নাস্তিক-মুক্তমনা, খ্রিস্টান মিশনারী তথা ইসলামবিদ্বেষীদের অনেক মুখরোচক একটি অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আর তা হলো ইসলাম কেন যুদ্ধবন্দিনী দাসীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা বৈধ করেছে?
.
প্রাচীন গ্রীসে নারীদেরকে সম্পত্তি বলে বিবেচিত করা হত, আর যুদ্ধবন্দী নারীদের ধর্ষন করা ছিলো “সামাজিক ভাবে ব্যাপক গ্রহনযোগ্য যুদ্ধনীতি” [1]
রোম, গ্রীস ছাড়া অন্যান্য স্থানে নারীদের এর থেকে ভালো ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়না। যেখানে যুদ্ধের পরে একটি অতি স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো ধর্ষন। যেখানে দাসীরা ছিলো সমাজের সবচেয়ে নিচু পর্যায়ের তাদের সাথে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা যেত, যেখানে তারা ছিলো পুরুষের যৌনভোগের সস্তা বস্তু। তারা ছিলো অবজ্ঞা-অবহেলার পাত্র। যার সামান্য বর্ণনা দিতে গেলেও পৃথক গ্রন্থ লেখার প্রয়োজন, যা আমার উদ্দেশ্য নয়।
.
পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে দীর্ঘদিনের সামাজিক ব্যাধি দাসপ্রথাকে ইসলাম পরিশীলিত ও নিয়ন্ত্রিত করেছে একদিকে যেমন শরীয়াতসম্মত জিহাদের মাধ্যমে কাউকে দাস বানানোর(Enslaving) এই একটি মাত্র পথই ইসলাম খোলা রেখেছে অন্যদিকে এর বিপরীতে দাসমুক্তির বেশ কিছু বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী পথ উন্মোচন করেছে। আর তাই ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান হওয়ার কারনে সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসা দাসীদের সাথে অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনতাকে বন্ধ করতে এবং পাশাপাশি দাসীদের জৈবিক চাহিদা পূরনের জন্য শুধুমাত্র বৈধভাবে মালিকানায় প্রাপ্ত দাসীর সাথে শারীরিক মেলামেশাকে বৈধ করেছে।
দাসীর সাথে শারীরিক মেলামেশা আল্লাহ বৈধ করেছেন যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমানিত যেমন { (সূরা নিসা ৪ঃ২৪), (সূরা মুমিনূন ২৩ঃ৬), (সূরা আযহাব ৩৩ঃ৫০), (সূরা মাআরিজ ৭০ঃ৩০)},
.
আচ্ছা, তাহলে একজন কীভাবে কোন দাসীর পরিপূর্ণ মালিকানা লাভ করতে পারে?? তা দুটি উপায়েঃ-
১। নিজে কাফিরদের বিপক্ষে জিহাদে অংশগ্রহন করে নিজের গনীমতের অংশ থেকে যদি দাসী লাভ করে থাকে;
২। যদি অন্য কারো নিকট থেকে যিনি শারঈভাবে দাসীর মালিক তার নিকট থেকে দাসীকে ক্রয় করে থাকে;
.
আর এখানে কিছু ব্যাপার লক্ষনীয় তা হলো –
ক) উপরোক্ত দুই উপায় ছাড়া আর কোনো ভাবেই দাসীর মালিকানা পাওয়া যায় না তাই এই দুটি পন্থা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে কেউ যদি চাকরানীর সংগে বা চুক্তিবদ্ধ হয়ে উপপত্নীরুপে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তবে তা হারাম ও ব্যভিচার বলে গন্য হবে[2];
খ) শারঈ জিহাদ যেহেতু শুধুমাত্র কাফিরদের বিপক্ষে লড়া যায় তাই মুসলিমদের দুই পক্ষের মধ্যেকার রাজনীতি, ভাষা, অত্যাচার, নিপীড়ন, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির কারনে সংঘটির যুদ্ধকে জিহাদের নাম দিয়ে সেখানে মুসলিম নারীদেরকে দাসী বানানো হারাম হবে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন অবশ্যই ব্যভিচার বলে গন্য হবে। তাই অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনাধারী মুখোশের অন্তরালের ইসলামবিদ্বেষীদের ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংলাদেশের মা-বোনের সাথে আচরনকে পুজি করে ইসলামকে কটাক্ষ করে থাকে, যা তাদের জ্ঞানের স্বল্পতাকে প্রমান করে;
গ) দাসীর সাথে এমন সম্পর্ক করা ইসলামই প্রথম শুরু করেনি বরং ইসলাম পূর্বেকার এই সম্পর্কিত যাবতীয় ঘৃন্যতা ও বল্গাহীন পাশবিকতাকে বন্ধ করে দিয়ে একে নিয়ন্ত্রিত ও মানবিক করেছে;
ঘ) দাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা ইসলামের কোনো অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় বরং তা বৈধ;
.
দাসী মিলনের ব্যাপারে দৃষ্টিকোনঃ-
(১) ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে যুদ্ধবন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হবে না এমনকি মুক্তিপনের বিনিময়ে ও নয় তাহলে মুজাহিদিনরা (যারা জিহাদে সরাসরি অংশগ্রহন করেছেন) যদি গনীমতের মাল হিসেবে দাসী তার নির্দিষ্ট অংশে (হিসসা) পেয়ে থাকেন তাহলেই শুধু দাসী হালাল হবে অন্যথায় নয়। আর গনীমত বন্টন হওয়ার পূর্বে কোনোমতেই গনীমত থেকে কিছু নেওয়া যাবেনা এটাই সাধারন নিয়ম[3]
.
আর হাদীছে গনীমতের মাল বন্টনের পূর্বে কিছু নেওয়ার ব্যাপারে কঠিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে যে এমন করবে সে রাসুলুল্লাহর (صلى اللّٰه عليه وسلم) উম্মাত বলে পরিগনিত হবে না বলে হাদীছে কড়া তিরস্কার আছে।[4] আর তাই যেহেতু গনীমত বন্টনের পূর্বে কোনোমতেই গনীমত থেকে কিছু নেওয়া যাবেনা তাই দাসীর সাথে মিলিত হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠেনা আর কেউ এমনটি করলে তা যিনা বলে বিবেচিত হবে এবং সে অবশ্যই রজমের যোগ্য হয়ে যাবে।
.
যেমন হাদীছ বর্ণিত আছে যে, খালিদ (রাদি) যিরার ইবনুল আহওয়াজকে পাঠালেন। তারা বানী আসাদকে আক্রমন করলে সেখানে এক সুন্দরী নারীকে তারা বন্দী করলে। তিনি বন্টন হওয়ার পূর্বেই তাকে তার সঙ্গীদের নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে তার সাথে মিলিত হলেন, পরবর্তীতে তিনি অনুতপ্ত বোধে খালিদ(রাদি) এর নিকট যেয়ে বললে খালিদ(রাদি) উমার ইবনুল খাত্তাবের(রাদি) নিকট লিখে জানালে। তিনি বলেন, যিরার রজমের যোগ্য (যেহেতু তিনি গনীমতের মাল বন্টনের পূর্বেই নিজের ইচ্ছামত নারীকে বেছে নিয়ে মিলিত হয়েছেন), পরবর্তীতে রজম করার পূর্বেই যিরার ইবনুল আহওয়াজ মারা যান। [5]
.
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে গনীমত বন্টনের পূর্বে কোনোমতেই দাসীদের স্পর্শ ও করা যাবেনা। হাদীসটি অভিযোগকারীদের মুখে চপেটাঘাত কেননা তারা অনেকে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় মুসলিমরা নাকি যুদ্ধক্ষেত্রেই নারীদের ধর্ষন করে(!!!) নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
.
(২) গর্ভবতী যুদ্ধবন্দিনীর সাথে মিলিত হওয়া যাবেনাঃ
রাসুলুল্লাহ(صلى الله عليه وسلم) বলেছেন, “ কোন গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে সন্তান প্রসবের পূর্বে ও কোনো নারীর সাথে হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার পূর্বে মিলিত হবেনা” এই বিষয়ে বিভিন্ন হাদীছ বর্নিত আছে।[6]
.
(৩) বন্দিনী যদি গর্ভবতী না হয় তবে এক ইদ্দত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবেঃ
রাসুলুল্লাহ(صلى الله عليه وسلم) বলেছেন, “ কোনো গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে সন্তান প্রসবের পূর্বে এবং অন্য নারীর(বন্দিনী) সাথে এক হায়েজ হতে পবিত্র হওয়ার পূর্বে মিলিত হবেনা” [7]
.
এই বিষয়ে অন্যান্য হাদীছ ও বর্নিত হয়েছে[8]
(৪) দুই ক্রীতদাসী বোনের সাথে একত্রে মিলিত হওয়া যাবে নাঃ
সাহাবী উছমান ইবন আফফান(রাদি), যুবাঈর ইবনুল আওয়াম(রাদি), অন্যান্য সাহাবী এবং ইমাম মালিক(রাহ) এর মতে দুই ক্রীতদাসী বোনের সাথে একত্রে( বুঝানো হচ্ছে এক বোনের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে অন্য বোনের সাথে) সম্পর্ক রাখা যাবেনা।[9]
.
উমার(রাদি) এর মতে মা এবং কন্যার সাথে ও একই সময়ে মিলিত হওয়া যাবেনা।[10]
.
(৫) দাসী শুধুমাত্রই তার মালিকের জন্যঃ
ইসলামে দাসী নারীকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলে বিবেচনা করা হয় না। যেখানে প্রাচীন গ্রীসে ও রোমানে দাসী নারীকে মনে করা হত জনগনের সম্পত্তি। সেখানে ইসলামে শুধুমাত্র মালিকের জন্যই দাসীকে বৈধ করেছে আর কারো জন্য নয়। নিজের বাবার[11] বা এমনকি নিজের স্ত্রীর[12] দাসীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও জায়েজ নেই। যদি স্ত্রীর সম্মতি থাকে তবে পুরুষকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে এবং যদি স্ত্রীর সম্মতি না থাকে তবে তা জিনার দায়ে রজম করা হবে।
.
(৬) কৃতদাসীর বিয়ে দিয়ে দিলে সে মালিকের জন্য হারাম হয়ে যাবেঃ
রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) বলেছেন, “ তোমাদের কেউ যদি পুরুষ দাসীকে ,তার নারী দাসীর সাথে বিয়ে দেয় তবে তার গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত হবেনা।[13]
.
(৭) দাসীর বৈবাহিক সম্পর্কঃ
কোনো মহিলাকে যদি স্বামীর পূর্বেই যদি দারুল ইসলামে বন্দী করে নিয়ে আসা হয় এবং স্বামী যদি দারুল হারবে থেকে যায় তাহলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটবে। আর যদি স্বামী এবং স্ত্রীকে একত্রে বন্দী করা হয় তবে স্বামীর পূর্বে স্ত্রীকে দারুল ইসলামে আনা যাবেনা এবং তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অটূট থাকবে। যেমনটি ইমাম মুহাম্মাদ বর্ণনা করেছেন তার সিয়ারুস সাগীর কিতাবে।[14] ইমাম সারাখসী ও এমনটিই বলেন।[15]
.
এখানে খুব মুখরোচক একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, ইসলাম কি বন্দিনীদের ধর্ষন করার অনুমতি দেয়, কেননা একজন মেয়ে কিভাবে এমন কারো সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে রাজী হতে পারে যে তার পরিবারের লোকদেরকে হত্যা করেছে?? সুতরাং মুসলিমরা নিশ্চয়ই ধর্ষন করে(নাউযুবিল্লাহ)।
.
প্রথমত, তারা কোন প্রমানই দেখাতে পারবেন না যে মুসলিম সৈন্যরা বন্দিনীদেরকে ধর্ষন করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। কোন প্রমানই নয়। আর একজন মেয়ে কেন তার পরিবার হন্তাদের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে যাবেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, এই অভিযোগকারীদের অনেকেই ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত নয়।
.
জন ম্যাকক্লিনটক(মৃ-১৮৭০) লেখেন,
“ Women who followed their father and husbands to the war put on their finest dresses and ornaments previous to an engagement, in the hope of finding favor in the eyes of their captors in case of a defeat.[16]
নিজেই একটু দেখতে পারেন,
(https://books.google.com.bd/books…)
.
ম্যাথু বি সোয়ার্টজ লেখেন,
“The Book of Deuteronomy prescribes its own rules for the treatment of women captured in war [ Deut 21:10-14 ] . Women have always followed armies to do the soldiers’ laundry, to nurse the sick and wounded, and to serve as prostitutes
They would often dress in such a way as to attract the soldiers who won the battle. The Bible recognizes the realities of the battle situation in its rules on how to treat female captives, though commentators disagree on some of the details.
The biblical Israelite went to battle as a messenger of God. Yet he could also, of course, be caught up in the raging tide of blood and violence. The Western mind associates prowess, whether military or athletic, with sexual success.
The pretty girls crowd around the hero who scores the winning touchdown, not around the players of the losing team. And it is certainly true in war: the winning hero “attracts” the women. [17]
.
স্যামুয়েল বার্ডার(মৃ ১৮৩৬) লেখেন,
“It was customary among the ancients for the women, who accompanied their fathers or husbands to battle, to put on their finest dresses and ornaments previous to an engagement, in order to attract the notice of the conqueror, if taken prisoners.” [18]
নিজেই একটু দেখে নিতে পারেন,
(https://books.google.com.bd/books/reader…)
.
তাই বলা যায় যে, পরিবারের হন্তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা মোটেই আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয় যেটা ইতিহাস দিয়েই প্রমানিত।
.
দ্বিতীয়ত, আমরা পূর্বের আলোচনা থেকে বুঝতে পারছি যে, বন্দিনীদেরকে ইদ্দত পালনের বা হায়েজ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে সময় দেওয়া আবশ্যক। এখান থেকে গুরুত্বপূর্ন বিধান লক্ষ্য করা যায়, এই সময় দেওয়ার ফলে বন্দিনীদেরকে তাদের নতুন ইসলামী পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা করে থাকে যেমনটি মোল্লা আলী ক্বারী(রাহ)বলেছেন।[19]
এতে করে তারা নতুন ইসলামিক পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে পারে, ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে।
.
তৃতীয়ত, যদি বন্দিনীরা যদি তাদের সাথে সম্পর্কে রাজী নাই থাকত তবে মালিকরা তাদের বিক্রি করে দিত যাতে অন্য মালিকের কাছে দাসী চলে যেতে পারে এতে করে হয়ত দাসীর অন্য মালিকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটে। এখানে ধর্ষনের ব্যাপার স্যাপার কোথা থেকে আসলো?
.
চতুর্থত, বন্দিনীরা যখন দেখবে যে তারা এমন কিছু মানুষের সাক্ষাত পেয়েছে যারা একেবারে আলাদা, অনন্য ও অসাধারন, যারা বিশ্বমানবতাকে আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহবান করে, যারা সকলকে আল্লাহর ভালোবাসা, তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে আহবান করে, যাদের নিকট তাদের নাবীর(صلى الله عليه وسلم) কথা সর্বোচ্চে ও সর্বোর্দ্ধে, যাদের নিকট আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই জীবনের এক ও একমাত্র লক্ষ্য, সেই মহান অধিপতির জন্য জীবন দেওয়াকে জীবনের যারা থেকে ও বেশী ভালোবাসে, যাদের কাছে এই দুনিয়ার ধনসম্পদ, নারী, বাড়ি, সুদৃশ্য গাড়ি তুচ্ছ, দিনের বেলা রোযা রেখে ওই জিহাদের ময়দানের বীর সেনানি যখন মানুষ যখন ঘুমে বিভোর তখন আরামের শয্যা ত্যাগ করে মহান সেই সত্তার কাছে সিজদাহয় অবনিত হয়, নিজের গুনাহর জন্য ক্ষমা চায়। এরা যখন দেখবে তাদের নেতা খেজুর পাতার ওপরেই আরামসে ঘুম দেয়, , তারা যখন প্রত্যক্ষ করবে এরা যারা দাসকে রুটি দিয়ে নিজেরা সন্তুষ্টির সাথে খেজুর খেয়ে দিনাতিপাত করে, নিজেরা তাই খায় যা দাস দাসীরা খায় এর তাই পরিধান করে যা দাস দাসীরা পরিধান করে, যাদের রাষ্ট্রনায়ক নিজে উটের রশি ধরে দাসকে উটের পিঠে বসায়, তারা যখন ইসলামের সৌন্দর্য ও স্বরুপ, ন্যায়বিচার, ক্ষমাপরায়নতা, দেখতে পাবে তখন তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে রাজী হওয়া অস্বাভাবিক নয় বরং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
.
দাসীর সাথে সম্পর্কের লুকায়িত হিকমাহ ও যৌক্তিকতাঃ
তার আগে আমরা একটু পিছনে দিকে ফিরে তাকাইঃ
পূর্বে, দাসীর বিয়ের পরেও দাসী মালিকের চাহিদা মেটাতে বাধ্য ছিলো। তাদের সম্পর্কের কারনে জন্ম নেওয়া বাচ্চার পিতৃত্ব ও তারা স্বীকার করত না।[20]
দাসীর সন্তান ও দাস হিসেবেই বিবেচিত হত। আর মালিক পিতৃত্ব স্বীকার করত না আর তার পক্ষেই দেশের প্রশাসন থাকত।[21]
ইহুদী সমাজে দাসীদেরকে পরিবারের ভিতরেই অথবা বাহিরে পতিতা হিসেবে ব্যবহার করা পূর্বে সাধারন ব্যাপার বলে গন্য করা হত।[22]
রোমান সমাজে বড় বড় ব্যবসায়ীদের দাসীদেরকে জোর করে পতিতা বানিয়ে রাখা হত অন্য পুরুষের খায়েশ পুরনের জন্যে।[23]
আসুন ইসলামের দিকে ফিরে আসি।
.
পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে ইসলামের দাসপ্রথার ভিত্তি কি? এবং এখন পর্যন্ত দাসপ্রথাকে কেন ইসলাম বৈধ করেছে? এই বৈধতার সীমাই বা কতটুকু? এই পর্বে আরো আলোচনা করা হয়েছে যে, ইসলামে দাসীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও সীমা। এর যৌক্তিকতা ও লুকায়িত সৌন্দর্য ও হিকমাহ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) পূর্বে দাসীদেরকে যে কেউই ব্যবহার করতে পারত এমনকি একই পরিবারের অনেক সদস্য তাদেরকে ভোগ করতে পারত। তবে ইসলাম শুধুমাত্র মালিকের জন্যই বৈধ করেছে। এতে প্রাচীনকালে যেমন যুদ্ধ শেষে নারীদেরকে ধর্ষন করা হত, বা তাদেরকে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হত। ইসলাম সেই সুযোগকে মিটিয়ে দিয়েছে। ইসলামে বৈধভাবে মালিকানাপ্রাপ্ত মালিকের সাথে দাসীর শারীরিক সম্পর্কের সুযোগ রেখে নারীকে বেইজ্জতি থেকে বাচিয়েছে, তাদেরকে সম্মানিত করেছে, তাদেরকে নতুন একটি পরিবার দিয়েছে, তাদেরকে অন্ন-বস্ত্র,বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিয়েছে;
(২) মালিক ও দাসীর সম্পর্ক অবশ্যই ঘোষনা করতে হবে। যাতে লোকমনে তাদের দুইজনের ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ ও সংশয় না থাকে। এতে করে নারীটি পায় যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা;
(৩) এর ফলে দাসীটির শারীরিক চাহিদা পূরনের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা হয়, এতে একদিকে দাসীটির স্বাভাবিক চাহিদা পূরন হয় অন্যদিকে দাসীটি চাহিদা পূরন না করতে পেরে অবৈধ কোনো পন্থা বেছে নিবেনা এতে রাষ্ট্রে চারিত্রিক পবিত্রতা ও শৃংখলা বজায় থাকব;
(৪) মালিকের জন্য দাসীকে বিয়ে করা জায়েজ।[24]
যেমন হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি দাসীকে উত্তম রুপে লালন-পালন, প্রতিপালন করে, তার ্প্রতি ইহসান করে, তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে তার জন্যে আছে দ্বিগুন সওয়াব;[25]
(৫) দাসীকে কোনোমতেই ব্যভিচারে জোর করা যাবেনা যেমনটা রোমান সমাজে প্রচলন ছিলো;
(৬) দাসীকে অন্ন-বস্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে হবে, সাথে উত্তম আচরন করতে হবে;
(৭) দাসী যদি উম্মুল ওয়ালাদ অর্থ ওই মালিকের সন্তানের জননী হয় তবে ওই দাসী বিক্রি হারাম হয়ে যাবে। হাদীছে এসেছে, তোমরা উম্মুল ওয়ালাদ বিক্রি করোনা। [26]
আর ওই দাসী মালিকের মৃত্যুর পরে মুক্ত হয়ে যাবে।[27] এতে যেমন দাসীর মুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে, তেমনি সন্তানের পিতৃপরিচয়ের নিশ্চয়তা আছে। আর সন্তান ও মুক্ত বলে বিবেচিত হবে;
(৮) দাসীর জন্য এ সুযোগ ও রয়েছে সে মালিকের কাছে দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে এবং দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে। দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে এই সিরিজের পর্ব-১ এ আলোচনা করা হয়েছে;
(৯) সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে দাসী খুব কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে, বুঝতে, উপলব্ধি করতে পারে। এতে হয়ত সে ইসলাম গ্রহন করে নিতে পারে, যা তার জন্যে চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর চিরশান্তির জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে পারে;
[চলবে ইন শা আল্লাহ]
…………………………………
তথ্যসূত্রঃ
[1] https://en.wikipedia.org/wiki/Wartime_sexual_violence
[2] https://islamqa.info/en/26067
[3] তিরমিযী, হা নং- ১৫৬৩ এবং ১৬০০, শায়খ আলবানীর মতে সনদ সহীহ
[4] তিরমিযী হা নং-১৬০১, সনদ সহীহ
[5] সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, (দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ), পৃ-১৭৭, হা নং- ১৮২২২, হাদীছটির হারুন ইবনুল আসিম নামক রাবির কারনে দুর্বল।
[6] সহীহ মুসলিম, ইসে, ৫/৮৫, হা-৩৪২৬, সুনান আবু দাউদ, ইফা, ৩/১৬১, হা-২১৫৩-৫৫, তিরমিযী, হা-১৫৬৪
[7] সুনান আবু দাউদ, ইফা, ৩/১৬১, হা-২১৫৪
[8] ঐ, হা-২১৫৫-৫৬, তিরমিযী, ইবন হিব্বান।
[9] মুয়াত্তা মালিক, ইফা, ২/১৪৪-৪৫, রেওওয়ায়েত-৩৪-৩৫
[10] ঐ, রেওওয়ায়েত-৩৩
[11] ঐ, ১/১৪৬-৪৭, রেওওয়ায়েত-৩৬-৩৮
[12] সুনান আবু দাউদ, হা-৪৪৫৮-৫৯
[13] ঐ,হা- ৪১১৩
[14] কিতাবুস সিয়ারুস সাগীর (ইংরেজী অনুবাদ),অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৪৫, পৃ-৫১,
[15] ঐ, ফুটনোট-৪৬, পৃ-৯৩
[16] (John McClintock, James Strong, “Cyclopædia of Biblical, Theological, and Ecclesiastical Literature” [Harper & Brothers, 1894], p. 782)
[17] Matthew B. Schwartz, Kalman J. Kaplan, “The Fruit of Her Hands: The Psychology of Biblical Women” [Wm. B. Eerdmans Publishing, 2007] , pp. 146-147
[18] Oriental Customs Or, an Illustration of the Sacred Scripture, Williams and Smith, London, 1807 vol.2 p.79, no. 753
[19] মিরকাতুল মাফাতীহ (দারুল ফিকর), ৫/২১৮৯
[20] https://www.bowdoin.edu/~prael/projects/gsonnen/page4.html
[21] http://www.womenintheancientworld.com/women%20and%20slavery…
[22] The Cambridge World History of Slavery, vol.1, The ancient Meddeterrean World, pg-445
[23] Roman Social-Sexual Interactions, A critical Examination of the Limitations of Roman Sexuality, (University of Colorado, Undergraduate Honors Theses), pg-72
[24] সূরা নিসা ৪ঃ২৫
[25] সহীহ বুখারী, ইফা, হা-২৩৭৬, ২৩৭৯
[26] সিলসিলাহ সহীহাহ, ৫/৫৪০, হা-২৪১৭
[27] কুরআনুল কারীম বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ড, আবু বকর জাকারিয়া, ১/৪০৬
=====================
লেখকঃ হোসাইন শাকিল
=====================
.
Leave Your Comments